ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি
ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি।ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি জেনে নিয়মিত ব্যায়াম করা সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ব্যায়াম, যা শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতির সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিশাল প্রভাব ফেলে।
শুরুকথা
প্রতিদিন ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি অনুযায়ী সহজ কিছু অনুশীলন শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। অনেকে মনে করেন ব্যায়াম জিমে গিয়ে অনুশীলন করার মাধ্যমে করতে হয়। এই ধারণাটি সঠিক নয়। প্রিয় পাঠক ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি জেনে আপনার উদ্দ্যেশ্য পূরণ করুন।
ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি
ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনি সর্বোচ্চ উপকার পাবেন এবং আঘাতের ঝুঁকিও কমবে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা দেওয়া হলো:
১। ওয়ার্ম-আপ (Warm-up) করুন
ব্যায়ামের আগে ৫-১০ মিনিট হালকা ওয়ার্ম-আপ করুন। এতে পেশি উষ্ণ হবে ও ইনজুরির সম্ভাবনা কমবে।ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতির উদাহরণ:
- হালকা জগিংঃ হালকা জগিং হলো ধীরগতির দৌড়, যা সাধারণ হাঁটার চেয়ে একটু দ্রুততর কিন্তু দৌড়ানোর চেয়ে ধীর। এটি কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস উন্নত করতে, ক্যালরি বার্ন করতে ও শরীরকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
- হালকা জগিং ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি
- মাথা সোজা রাখুন এবং সামনের দিকে তাকিয়ে থাকুন।
- কাঁধ আরামদায়ক অবস্থানে রাখুন, বেশি শক্ত করে টানবেন না।
- হাতগুলো ৯০° অ্যাঙ্গেলে রেখে সামনে-পেছনে নড়ান।
- পায়ের আঙুলের বদলে গোড়ালি দিয়ে প্রথমে মাটিতে নামুন, এরপর সামনের দিকে ধীরে ধীরে চাপ দিন।
- হাত-পা ঘোরানোঃ হাত-পা ঘোরানো (Arm & Leg Rotation) হলো একটি সাধারণ ওয়ার্ম-আপ এবং ফ্লেক্সিবিলিটি এক্সারসাইজ, যা শরীরকে উষ্ণ করতে এবং পেশিকে নমনীয় করতে সাহায্য করে। এটি বিশেষ করে হাত, কাঁধ, পা ও কোমরের জয়েন্টের জন্য উপকারী।
- হাত-পা ঘোরানো ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি
- সোজা হয়ে দাঁড়ান, পা কাঁধ-সমান ফাঁক রাখুন।
- হাত দুটো সম্পূর্ণ প্রসারিত করে পাশে রাখুন।
- ধীরে ধীরে হাত সামনে দিকে ছোট ছোট বৃত্তাকারে ঘোরাতে শুরু করুন।
- ধীরে ধীরে বৃত্ত বড় করুন এবং ১৫-২০ সেকেন্ড করুন।
- এবার বিপরীত দিকে (পেছনের দিকে) একইভাবে হাত ঘোরান।
- এই প্রক্রিয়াটি ২-৩ বার পুনরাবৃত্তি করুন।
- স্ট্রেচিংঃ স্ট্রেচিং (Stretching) হলো শরীরের পেশিগুলো প্রসারিত করার একটি ব্যায়াম, যা নমনীয়তা বাড়ায়, ইনজুরির ঝুঁকি কমায় এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখে। এটি ওয়ার্ম-আপ এবং কুল-ডাউন উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
- স্ট্রেচিং ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি
স্ট্রেচিং সাধারণত দুই ধরনের হয়:
- ডায়নামিক স্ট্রেচিং (Dynamic Stretching): ব্যায়ামের আগে ওয়ার্ম-আপের জন্য ব্যবহার করা হয়।
- স্ট্যাটিক স্ট্রেচিং (Static Stretching): ব্যায়ামের পরে শরীর ঠান্ডা করতে ব্যবহার করা হয়।
আরও জানুনঃ সকালে ব্যায়াম করার ২০টি উপকারিতা
২। সঠিক ফর্ম ও টেকনিক বজায় রাখুন
- ব্যায়াম করার সময় ভুল ভঙ্গি এড়িয়ে চলুন।
- শরীর সোজা রেখে স্কোয়াট, লঞ্জ, ডেডলিফটের মতো ব্যায়াম করুন।
- ভারী ওজন তুলতে গেলে ধাপে ধাপে ওজন বাড়ান।
৩। ব্যায়ামের ধরন ও সময় ঠিক করুন
- কার্ডিও ব্যায়াম (Cardio): হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। (২০-৩০ মিনিট)
- স্ট্রেন্থ ট্রেনিং (Strength Training): পেশি গঠনে সাহায্য করে। (৪৫-৬০ মিনিট)
- স্ট্রেচিং (Stretching): নমনীয়তা বৃদ্ধি করে এবং ইনজুরি প্রতিরোধ করে। (১০-১৫ মিনিট)
৪। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
- প্রতিদিনের ব্যায়ামের পর ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক।
- অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে পেশি ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে, তাই মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিন।
৫। সঠিক ডায়েট অনুসরণ করুন
- প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট এবং ভিটামিনযুক্ত খাবার খান।
- ব্যায়ামের আগে ও পরে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- প্রোটিন শেক বা স্মুদি নিতে পারেন।
৬। ধৈর্য ও নিয়মিততা বজায় রাখুন
- ফল পেতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে।
- সপ্তাহে অন্তত ৪-৫ দিন ব্যায়াম করুন।
শেষকথা
ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি জেনে আপনার ফিটনেস লেভেল অনুযায়ী পরিকল্পিত ও সঠিকভাবে ব্যায়াম করলে ভালো ফল পাবেন। এই আর্টিকেলটির সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url