রোজা ভঙ্গের কারণ ২৯টি
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ জানা প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য প্রয়োজন। ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে রোজা তৃতীয়। রোজা মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান।
সুব্হে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে ইচ্ছাকৃতভাবে পান, আহার ও যৌন তৃপ্তি থেকে বিরত থাকাকে রোজা বলা হয়।
শুরুকথা
প্রিয় পাঠক জেনে রাখুন প্রত্যেক বোধ সম্পন্ন,বালেগ ও সুস্থ নর-নারীর উপর রমজানের রোজা রাখা ফরজ। আর এই ফরজ ইবাদত যেন নষ্ট না হয়,তার জন্য রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ জেনে রাখুন।
রোজা ভঙ্গের কারণ এবং যে কারণে কাযা আদায় ওয়াজিব হয়
১। ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করলে বা অল্প বমি আসার পর তা গিলে ফেললে।
২। কুলি করার সময় অনিচ্ছাবশত কণ্ঠনালিতে পানি চলে গেলে।
৪। এমন কোন জিনিস খেলে যা সাধারণত খাওয়া যায় না। যেমন- কাঠ, লোহা, কাগজ, পাথর, মাটি, কয়লা ইত্যাদি।
৬। আগরবাতি প্রভৃতির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নাকে বা হলকে পোঁছালে।
৭। ভুলে পানাহার করার পর রোজা ভঙ্গে গেছে মনে করে আবার ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কিছু পানাহার করলে।
৮। রাত আছে মনে করে সুব্হে সাদেকের পরে সেহ্রী খেলে। এটি একটি রোজা ভঙ্গের কারণ।
৯। ইফতারীর সময় হয়নি, দিন রয়ে গেছে,অথচ সময় হয়ে গছে-এই মনে করে ইফতারী করলে।
১০। দুপুরের পরে রোজার নিয়াত করা রোজা ভঙ্গের কারণ এর মধ্যে অন্যতম।
১১। দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে তা যদি থুথুর চেয়ে পরিমাণে বেশি হয় এবং কণ্ঠনালীর নিচে চলে যায়।
১২। কেউ জোর পূর্বক রোজাদারের মুখে কোন কিছু দিলে এবং তা কণ্ঠনালীতে পৌছে গেলে।
১৩। দাঁতে কোন খাদ্য টুকরা আটকে ছিল এবং সুব্হে সাদেকের পর তা যদি পেটে চলে যায় তবে সে টুকরা ছোলা বুটের চেয়ে ছোট হলে রোজা ভেঙ্গে যায় না, তবে এরূপ করা মাকরূহ। কিন্তু মুখ থেকে বের করার পর গিলে ফেললে তা যতই ছোট হোক না কেন রোজা কাযা করতে হবে।
১৪। রোজা ভঙ্গের কারণ এর মধ্যে অন্যতম হলো পেশাবের রাস্তায় বা স্ত্রীর যোনিতে কোন ঔষধ প্রবেশ করানো।
১৫। পানি বা তেল দ্বারা ভিজা আঙ্গুল যোনিতে বা পায়খানার রাস্তায় প্রবেশ করালে।
১৬। শুকনো আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে পুরোটা বা কিছুটা বের করে আবার প্রবেশ করালে। আর যদি শুকনো আঙ্গুল একবার প্রবেশ করিয়ে একেবারেই পুরোটা বের করে নেয়-আবার প্রবেশ না করায়, তাহলে রোজার অসুবিধা হয় না।
১৭। মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে গেলে এবং এই অবস্থায় সুব্হে সাদেক হয়ে গেলে।এটিও রোজা ভঙ্গের কারণ এর মধ্যে অন্যতম।
১৮। রোজা ভঙ্গের কারণ এর মধ্যে একটি হলো নাকে তেল ঢালা।
১৯। যদি কেউ রোজার নিয়তই না করে তাহলেও শুধু কাযা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
২০। স্ত্রীর বেহুশ থাকা অবস্থায় কিংবা বে-খবর ঘুমন্ত অবস্থায় তার সাথে সহবাস করা হলে ঐ স্ত্রীর উপর কাযা আদায় ওয়াজিব হবে।
২১। রমযান ব্যতীত অন্য নফল রোজা ভঙ্গ হলে শুধু কাযা আদায় ওয়াজিব হয়।
২২। এক দেশে রোজা শুরু করার পর অন্য দেশে চলে গেলে সেখানে যদি নিজের দেশের তুলনায় আগে ঈদ হয়ে যায়, তাহলে নিজের দেশের হিসেবে যে কয়টা রোজা বাদ গিয়েছে তার কাযা করতে হবে।আর যদি সেখানে গিয়ে রোজা এক দুটো বেড়ে যায় তাহলে তা রাখতে হবে।
২৩। রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মেয়েদের মাসিক ও সন্তান প্রসবের পর ঋতুস্রাব।
২৪। রোজা অবস্থায় ইসলাম ত্যাগ করা রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহের মধ্যে অন্যতম।
২৫। রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহের মধ্যে একটি হলো মুখে পান নিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া এবং এই অবস্থায় সুব্হে সাদেক করা।
আরও পড়ুনঃ খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ২৬টি
রোজা ভঙ্গের কারণ এবং যে কারণে কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টা আদায় ওয়াজিব হয়
২৭। রোজার নিয়ত করার পর দিনের বেলায় ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রী সম্ভোগ করলে। স্ত্রীর উপর কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টা আদায় ওয়াজিব হবে। স্ত্রীর যৌনির মধ্যে পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ প্রবেশ করালেই কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টা আদায় ওয়াজিব হয়ে যাবে, চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক।
২৮। রোযার নিয়ত করার পর পাপ হওয়া সত্ত্বেও যদি পুরুষ তার পুরুষাঙ্গ স্ত্রীর পায়খানার রাস্তায় প্রবেশ করায় এবং অগ্রভাগ ভিতরে প্রবেশ করে (চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক) তাহলেও পুরুষ স্ত্রী উভয়ের উপর কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টা আদায় ওয়াজিব হবে।
২৯। রোজা অবস্থায় কোন বৈধ কাজ করলে, যেমন- মাথায় তেল দিল, তা সত্তেও সে মনে করলে যে, রোজা নষ্ট হয়ে গিয়েছে ; আর তার পরে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করল, তাহলেও কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টা আদায় ওয়াজিব হবে।
শেষকথা
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ কি কি তা জেনে রোজার সময় এসব কাজ থেকে বিরত থাকুন। তবে ভুলবশত কোনো কিছু করা হলে, আল্লাহ ক্ষমাশীল। ইসলামে এর জন্য তওবা ও কাযা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। আশা করি আপনি বিষয়টি পড়ে উপকৃত হবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url