ক্রিপ্টোকারেন্সি কি বৈধ | ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে কাজ করে ?
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি | ক্রিপ্টোকারেন্সি কি বৈধ | ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে কাজ করে ? এই বিষয়গুলো আমাদের জানা প্রয়োজন। অনেকের মনে প্রশ্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি কি ? ইহা হলো ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা যা ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করে সুরক্ষিত করা হয়। এটি ব্লকচেইন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহৃত হয় অনলাইন লেনদেনের জন্য এবং কোনো মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই সরাসরি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির মধ্যে লেনদেন করা সম্ভব হয়।
আরম্ভ
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি ? হ্যাঁ ইহা এক ধরনের সাংকেতিক ডিজিটাল মুদ্রা। শুধুমাত্র ইন্টারনেট জগতে এই মুদ্রা ব্যবহার করা হয়। বাস্তবে এই ধরনের মুদ্রার কোন অস্তিত্ব নেই। এটি এমন এক ধরনের মুদ্রা, যা কোন দেশের সরকার গতানুগতিক নোট টাকার মতো করে ছাপায় না। বরং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের দ্বারা অসংখ্য কোডের মাধ্যমে এই অর্থ বা ভার্চুয়াল মুদ্রাগুলো তৈরি করা হয়েছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি ?
ক্রিপ্টো(Crypto) শব্দের অর্থ হচ্ছে গোপন। আর কারেন্সি(Currency) শব্দের অর্থ হলো অর্থ বা মানি।অতএব ক্রিপ্টকারেন্সি(Cryptocurrency)শব্দের অর্থ হচ্ছে গোপন অর্থ। ক্রিপ্টোকারেন্সি কি যার উত্তর হচ্ছে ডিজিটাল ভার্চুয়াল মুদ্রা। যার নির্দিষ্ট কোন অস্তিত্ব নেই, যাকে স্পর্শ করা যায় না। এটি এমন একটি মুদ্রা যা ব্লাক চেইন এর মাধ্যমে ওয়ালেটে সংরক্ষিত থাকে। এটি পেয়ার টু পেয়ারে আদান প্রদান করা হয়।যা কম্পিউটার বা মোবাইলের মাধ্যমে আদান-প্রদান করা হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি হচ্ছে এক ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা যা বিশ্বের সর্বপ্রথম বিকেন্দ্রিক মুক্ত সোর্স। এটি লেনদেনের জন্য কোন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা নির্দিষ্ট কোন জায়গার প্রয়োজন হয় না এবং কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ এটির নিয়ন্ত্রণ করে না।। ক্রিপ্টোকারেন্সি কোন দেশের সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত মুদ্রা নয়।ক্রিপ্টোকারেন্সি কি? ইহা জেনে নিন, কারণ বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে ক্রিপ্টোকারেন্সি কি তা নিয়ে খুবই তোলপাড় চলছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি হল বাইনারি উপাত্তের একটি সংকলন যা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এর অস্তিত্ব শুধু ইন্টারনেট জগতে বিদ্যমান। ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার বা লেনদেন শুধু অনলাইনেই সম্ভব। সূতরাং বুঝতেই পারছেন ক্রিপ্টোকারেন্সি কি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে কাজ করে।ক্রিপ্টোকারেন্সির সমস্ত ট্রানজেকশন ইতিহাস ব্লাক চেইনে সংরক্ষণ থাকে যা তৃতীয় কোন ব্যক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা পরিচালিত হতে পারেনা।
ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পূর্ণরূপে বিকেন্দ্রিকভাবে পরিচালিত ডিজিটাল মুদ্রা যা অর্থ প্রদানের একটি বিকল্প হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। এজন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি অনলাইন ভার্চুয়াল জগতের এমন মুদ্রা যাকে হাতে ধরা বা ছোঁয়া যায় না। ক্রিপ্টোকারেন্সির সম্পূর্ণ ধারণাটি আসলে দাঁড়িয়ে আছে ক্রিপ্টোগ্রাফি ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির ওপর। মুদ্রার লেনদেন ক্রিপ্টোগ্রাফির দ্বারা সুরক্ষিত হয়। অনলাইনে আদান-প্রদান পিয়ার-টু-পিয়ার প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি মুদ্রা দ্বারা সরাসরি তাৎক্ষণিক অনলাইনে লেনদেন সম্পন্ন করা যায়, যা থাকে ডিজিটাল ক্রিপ্টো ওয়ালেটে। এই মুদ্রার হিসাব রাখা হয় ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির মাধ্যমে ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দ্বারা, যা কিনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হয়ে থাকে। এই মুদ্রার বিশেষত্ব হচ্ছে এটি নিয়ন্ত্রণ কোনো ব্যাংক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল নয় এবং এটাকে হ্যাক করা প্রায় অসম্ভব।
আরও পড়ুনঃ ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার উপায়
ক্রিপ্টোকারেন্সি স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশ
২০০৯ সালে সর্বপ্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রচলন করা হয়। সাতোশি নাকামোতো ছদ্ম নামের এক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রচলন করেন। এই মুদ্রার প্রচলন করা হয় প্রেরক থেকে প্রাপক এর মাধ্যমে অনলাইন ভিত্তিক লেনদেন। তিনি ক্রিপ্টোকারেন্সি এর জনক হিসেবে পরিচিত, কিন্তু এই সাতোশি নাকামোতো আসলে কে; তা কেউ জানে না।
প্রকৃতপক্ষে সাতোশি নাকামোতো হয়তো এটি চায় না যে, কেউ তাকে খুঁজে বের করুক। ক্রিপ্টোকারেন্সি মূল ধারণাই হলো যে কেউ তারপরিচয় গোপন করে নিরাপদে সাধারণ মুদ্রার মতোই ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করতে পারবে। ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে লেনদেন করাই যেহেতু গোপনীয়তার সঙ্গে হয়ে থাকে, তাই সঙ্গত কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সির জনকের পরিচয় এখনো অজানা।
২০০৯ সালে একজন জাপানি নাগরিক ক্রিপ্টোকারেন্সির উদ্ভাবন করেন। ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি লোকজনের বুঝে আসে। ২০১৭ সালে এসে ক্রিপ্টোকারেন্সির বড় মাত্রার পরিবর্তন আসে।২০১৭ সাল থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে।
ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর যেহেতু কোনো দেশের সরকারের বা আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থার নিয়ন্ত্রণ বা কোনো ধরনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতা নেই, সেজন্য বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রায় নানারূপে নিষেধাজ্ঞা তৈরি হয়েছে। এত কিছুর পরও বিশ্বে ক্রিপ্টোকারেন্সি স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশ হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের অনুমতি দেয় মধ্য আমেরিকার দেশ ‘এল সালভেদর’।
মূলত নির্দিষ্ট কোনো নিয়ন্ত্রণকারী ও পর্যবেক্ষক সংস্থা না থাকার কারণে, প্রথম থেকেই এই ক্রিপ্টোকারেন্সি মুদ্রার প্রায়োগিক ব্যবহারের বিভিন্ন জটিলতা এবং নানা সমস্যার দিক আলোচনা, সতর্কবার্তা ও প্রশ্ন করে আসছে অর্থ, মুদ্রাবাজার বিশেষজ্ঞরা। তবে এর বিপরীতে অনেকে মনে করেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি হয়তো সমগ্র বিশ্বের মুদ্রা ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।
ক্রিপ্টোকারেন্সির তালিকা
কয়েন ক্যাপ মার্কেটের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বে প্রায় ২১ হাজার ৯১০টি ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে। বর্তমানে বহু ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে থাকলেও জনপ্রিয় কয়েকটি হলো-বিটকয়েন (Bitcoin)
ইথেরিয়াম (Ethereum)
ডগি কোয়েন (Doge Coin)
লাইট কয়েন (Light Coin)
কার্ডানো (Cardano)
বিনান্স কয়েন (Binance Coin)
নেম কয়েন (Name Coin)
রিপল (Ripple)
আরও পড়ুনঃ কোন অ্যান্ড্রয়েড ফোন আইফোনের মতো দেখতে
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি বাংলাদেশে বৈধ
২০১৭ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম বাড়ার মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এর ধারাবাহিকতায় ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ ক্রমে বাড়ছে। বিশেষ করে দেশের তরুণদের কাছে ক্রিপ্টোয় বিনিয়োগ, ট্রেডিং, মাইনিং করে জলদি অর্থবান হওয়ার পন্থা হিসেবে অনেকেই প্রচার করে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে।এখন প্রশ্ন হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি কি বাংলাদেশে বৈধ? বিস্তারিত জানবো।
বাংলাদেশে বর্তমানে কোনো ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সির আইনি বৈধতা নেই। সবচেয়ে জনপ্রিয় মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বাংলাদেশ সরকার ২০১৪ সালে অবৈধ ঘোষণা করেছে। এখন বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির আইনি স্বীকৃতি পেয়েছে। তার পরও বাংলাদেশ, মিসর, আলজেরিয়া, মরক্কোসহ প্রভৃতি দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সিএখনো নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে কোনো প্রকার ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন বা সংরক্ষণ সম্পূর্ণ বেআইনি বলা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ভার্চুয়াল ক্রিপ্টোকারেন্সি কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষ দ্বারা যেহেতু ইস্যু করা হয় না, সেজন্য এই মুদ্রার বিপরীতে কোনো আর্থিক দাবি স্বীকৃত নয়। তাই এসব মুদ্রায় লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনুমোদন করে না।
ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যাপারে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ দ্বারা সমর্থিত নয়। অনলাইনে নামবিহীন বা ছদ্মনামধারীর সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনে অনিচ্ছাকৃতভাবে হতে পারে মানিলন্ডারিং এবং সন্ত্রাস অর্থায়ন আইন লঙ্ঘন। একই সঙ্গে আর্থিক লোকসানের ঝুঁকিও প্রবল।
এটা সুস্পষ্ট যে, ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার কখনোই স্থির নয়। অন্যদিকে ইহার লেনদেনকারীদের যেহেতু চিহ্নিত করা যায় না, তাই এটি ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যায়। সর্বোপরি এখনো ক্রিপ্টোকারেন্সিবিষয়ক যথাযথ আইনের অভাব রয়েছে। সেটা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বের ক্ষেত্রেও । ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো নতুন মুদ্রাবাজারের ঝুঁকিকে পরিমাপ করে বিনিয়োগ করাটা যে সহজ নয়, সে ব্যাপারে কম-বেশি সবাই একমত হবে।
জেনে রাখা প্রয়োজন, ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য নেই কোনো আইন, নেই আইনি বৈধতা, বাজার অনির্ভরযোগ্য ও অস্থিতিশীল, কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা নেই, সর্বোপরি এ মুদ্রার গতিপ্রকৃতি যেহেতু ক্রমাগত পরিবর্তনশীল, সেখানে আমারা বিনিয়োগকারী হলে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়বে পারে। তাই খুবই সতর্কতার সঙ্গে আমাদের ডিজিটাল মুদ্রার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ শাওমি ফোন কোনটি আইফোনের মতো দেখতে
ক্রিপ্টোকারেন্সি হালাল নাকি হারাম
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি হালাল বা ক্রিপ্টোকারেন্সি হালাল নাকি হারাম, তা ইসলামিক পণ্ডিতদের মধ্যে একটি বিতর্কিত বিষয়। কারণ ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রক্রিয়া, লেনদেনের ধরণ এবং উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে এর ইসলামিক বৈধতা নির্ধারণ করা হয়। যেমন-
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসা কি হালাল বা ক্রিপ্টোকারেন্সি কি হালাল ? এই প্রশ্নের জবাবে,ক্রিপ্টোকারেন্সি হালাল হতে পারে যদি মুদ্রা হিসেবে ইহার গ্রহণযোগ্যতা থাকে। যদি ক্রিপ্টোকারেন্সি সাধারণ মুদ্রার মতো বৈধভাবে স্বীকৃত হয় এবং এটি পণ্য বা সেবা কেনার জন্য ব্যবহার করা হয়, তবে তা হালাল হতে পারে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসা কি হালাল বা ক্রিপ্টোকারেন্সি কি হালাল ? হ্যাঁ হালাল হতে পারে যদি ইহা বেআইনি কাজে ব্যবহার না করা হয়। যদি ক্রিপ্টোকারেন্সি কোনো অপরাধমূলক বা বেআইনি কাজে ব্যবহার না করা হয়, তাহলে এর ব্যবহার হালাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসা কি হালাল বা ক্রিপ্টোকারেন্সি কি হালাল ? হ্যাঁ হালাল হতে পারে যদি এটি একটি সাধারণ ব্যবসায়িক বিনিয়োগ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং জুয়া বা রিস্ক গ্রহণের মতো কোনো হাওয়ালা ব্যবস্থায় না পড়ে, তাহলে ইসলামিক ব্যবসার মূলনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে প্রধান সমস্যা হল এর অস্থিতিশীলতা এবং উচ্চ ঝুঁকি, ইসলামে যা অস্পষ্ট বা অনিশ্চিত হিসেবে বিবেচিত হয়। যে কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সি হারাম হতে পারে।অনেক সময় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগে মূলত জুয়া বা সুদ (রিবা) এর মতো অবৈধ উপায় ব্যবহার করা হয়, যা হারাম।ক্রিপ্টোকারেন্সি অনেক সময় বেআইনি কাজ যেমন মাদক, অবৈধ অস্ত্র বা মানি লন্ডারিং এর সাথে যুক্ত হয়, যা অবশ্যই ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে হারাম।
ক্রিপ্টোকারেন্সি হালাল নাকি হারাম তা নির্ভর করে একজন ইসলামিক স্কলার বা ফতোয়া বোর্ডের ওপর। কিছু স্কলার মনে করেন, যদি ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার স্পষ্ট, বৈধ এবং ন্যায়সঙ্গত হয়, তবে তা হালাল হতে পারে। আবার অন্যরা এটিকে হারাম হিসেবে গণ্য করেন, বিশেষ করে যদি এর লেনদেন প্রক্রিয়ায় উচ্চ ঝুঁকি বা বেআইনি কার্যকলাপ থাকে।তাই, ইসলামে এটি স্পষ্টভাবে হালাল বা হারাম ঘোষণা করা এখনো বিতর্কিত এবং এটি ব্যক্তির বিচার ও ফতোয়ার উপর নির্ভর করে।
আরও পড়ুনঃ আইফোনের মতো ফোন কোনটি জেনে নিন
ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয়
ক্রিপ্টো ট্রেডিং এর মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করা যায়। ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য ওঠানামার ভিত্তিতে ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনে এবং বিক্রি করে লাভ করা সম্ভব। এটি স্বল্পমেয়াদী লাভের জন্য জনপ্রিয় পদ্ধতি। তবে, এটি বাজার বিশ্লেষণ, স্ট্র্যাটেজি এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করে।
হোল্ডিং এর মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করা যায়। দীর্ঘমেয়াদে ক্রিপ্টোকারেন্সি ধরে রাখা এবং সময়ের সাথে তার মূল্যের বৃদ্ধি থেকে লাভ করা। উদাহরণস্বরূপ, যারা বিটকয়েন কিনে দীর্ঘ সময় ধরে রেখেছিলেন, তারা এর মূল্যের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি থেকে লাভ করেছেন।
স্টেকিং এর মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করা যায়। কিছু ক্রিপ্টোকারেন্সিতে স্টেকিং পদ্ধতি আছে, যেখানে আপনি আপনার ক্রিপ্টো সম্পদ লক করে রেখে নেটওয়ার্কের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন এবং এর মাধ্যমে রিওয়ার্ড (পুরস্কার) অর্জন করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ইথেরিয়াম ২.০-এ স্টেকিং করে আয় করা যায়।
মাইনিং এর মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করা যায়। মাইনিং প্রক্রিয়ায় কম্পিউটার দিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি নেটওয়ার্কের লেনদেন প্রমাণীকরণ করে পুরস্কার হিসেবে নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি পাওয়া যায়। বিটকয়েন, ইথেরিয়াম সহ অনেক ক্রিপ্টোকারেন্সিতে মাইনিং করা যায়, তবে এর জন্য উচ্চ ক্ষমতার হার্ডওয়্যার এবং বিদ্যুতের খরচ প্রয়োজন।
ডিফাই (DeFi) প্রটোকলস এর মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করা যায়। ডেসেন্ট্রালাইজড ফাইন্যান্স (DeFi) প্ল্যাটফর্মে আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি জমা রেখে লেন্ডিং বা লিকুইডিটি প্রোভাইডার হিসেবে আয় করা যায়। এর মাধ্যমে আপনি সুদ বা ফি আয় করতে পারেন।
এয়ারড্রপ এবং ফর্ক এর মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করা যায়। কিছু নতুন ক্রিপ্টো প্রজেক্ট বিনামূল্যে তাদের টোকেন বা কয়েন এয়ারড্রপ করে দেয়, যা ব্যবহারকারীরা নিজেদের ওয়ালেটে পেতে পারেন। এছাড়াও ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্লকচেইন ফর্ক হলে নতুন কয়েন পাওয়া যায়।
এনএফটি (NFTs) ক্রিয়েশন এবং বিক্রি এর মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করা যায়। আপনি যদি ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটর হন, তাহলে NFTs তৈরি করে সেগুলো বিক্রি করে আয় করতে পারেন। অনেক ফটোগ্রাফার এবং ডিজাইনার এই পদ্ধতিতে আয় করছেন।
আরও পড়ুনঃ আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স দাম কত?
ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ
ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ হলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যেখানে ব্যবহারকারীরা ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে, বিক্রি করতে বা বিনিময় করতে পারেন। এখানে ব্যবহারকারীরা বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, লাইটকয়েন, এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন করতে পারে। ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জগুলো সাধারণত দুটি ধরণের হয়ে থাকে।যথাঃসেন্ট্রালাইজড এবং ডেসেন্ট্রালাইজড।
সেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জগুলো কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তারা ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের সুবিধা প্রদান করে এবং ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টে ক্রিপ্টোকারেন্সি সংরক্ষণ করে। যেমন-
বিশ্বের বৃহত্তম এক্সচেঞ্জগুলোর মধ্যে বাইনান্স (Binance) একটি। এটি বিভিন্ন ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের সুযোগ দেয় এবং লিকুইডিটি অনেক বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিত্তিক একটি জনপ্রিয় এক্সচেঞ্জ হলো কয়েনবেস (Coinbase)। এটি সহজ ইন্টারফেসের জন্য বিখ্যাত এবং নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য উপযুক্ত।ক্র্যাকেন (Kraken) একটি নিরাপদ এবং বৈশ্বিকভাবে ব্যবহৃত এক্সচেঞ্জ, যেখানে বিভিন্ন ক্রিপ্টো লেনদেন করা যায়।
ডেসেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জে (DEX) কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ নেই। এখানে সরাসরি পিয়ার-টু-পিয়ার লেনদেন হয়, যেখানে ব্যবহারকারীরা নিজ নিজ ওয়ালেটে তাদের ফান্ড রাখেন এবং কোনো মধ্যস্থতা ছাড়াই লেনদেন করেন। যেমন-
ইথেরিয়াম ভিত্তিক ডেসেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জ, যেখানে বিভিন্ন ERC-20 টোকেন লেনদেন করা যায়।সুশিসওয়াপ ভিত্তিক ডেসেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জ, এটি ইউনিসওয়াপের মতোই, কিন্তু কিছু বাড়তি ফিচার নিয়ে আসে, যেমন লেন্ডিং এবং স্টেকিং।প্যানকেকসওয়াপ ভিত্তিক ডেসেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জ, এটি Binance Smart Chain (BSC)-এ পরিচালিত একটি জনপ্রিয় DEX।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ কীভাবে করবো। হ্যাঁ তার উত্তর হচ্ছে প্রথমে একটি নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ এক্সচেঞ্জ বাছাই করতে হবে। সেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জের জন্য আপনাকে পরিচয় যাচাইয়ের প্রয়োজনে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। আপনার এক্সচেঞ্জ অ্যাকাউন্টে ফিয়াট মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সি যোগ করতে হবে। তারপর আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে, বিক্রি করতে বা লেনদেন করতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ স্যামসাং ফোন কোনটি আইফোনের মতো দেখতে?
ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে তৈরি হয়?
ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি করার প্রক্রিয়াটি মূলত ব্লকচেইন প্রযুক্তি এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি-এর উপর ভিত্তি করে গঠিত।ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য প্রথমেই ব্লকচেইন তৈরি করতে হয়। ব্লকচেইন হলো একটি বিকেন্দ্রীভূত ডিজিটাল লেজার যা লেনদেনের তথ্য ধারাবাহিকভাবে ব্লক আকারে সংরক্ষণ করে। ব্লকচেইনে লেনদেনগুলি ক্রমানুসারে সজ্জিত থাকে এবং প্রতিটি ব্লক পূর্ববর্তী ব্লকের সাথে ক্রিপ্টোগ্রাফিক্যালি সংযুক্ত থাকে।
ক্রিপ্টোকারেন্সির নিরাপত্তা এবং লেনদেন যাচাই করার জন্য ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি লেনদেন একটি পাবলিক এবং প্রাইভেট কী-এর মাধ্যমে স্বাক্ষরিত হয়। পাবলিক কী হলো একটি সাধারণ ঠিকানা, যা সকল ব্যবহারকারী দেখতে পারে এবং প্রাইভেট কী হলো একটি গোপন কোড, যা দিয়ে লেনদেনের বৈধতা যাচাই করা হয়। সূতরাং ক্রিপ্টোকারেন্সি কি ক্রিপ্টোগ্রাফির অংশ? উত্তর হ্যাঁ।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি সনাতন মুদ্রার বিকল্প
ক্রিপ্টোকারেন্সি এখনও পুরোপুরি সনাতন মুদ্রার বিকল্প হিসেবে কাজ করছে না, তবে এটি একটি বিকল্প আর্থিক ব্যবস্থা হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই সনাতন মুদ্রার পাশাপাশি ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের অভাব, অস্থিতিশীলতা, প্রতিষ্ঠান এবং দেশের গ্রহণযোগ্যতা, নিরাপত্তা ও প্রতারণার ঝুঁকি, গোপনীয়তা ও নির্ভরযোগ্যতা, ডিজিটাল অ্যাক্সেস এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা ইত্যাদি কারণে এটি এখনও মুদ্রার বিকল্প হিসেবে পুরোপুরি গৃহীত হয়নি।
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কেন বিনিয়োগ করব
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করার কিছু কারণ রয়েছে, তবে এটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং উচ্চ-পর্যায়ের গবেষণা এবং ঝুঁকি বোঝার প্রয়োজন রয়েছে। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি অন্যান্য বিনিয়োগ, যেমন শেয়ার, গোল্ড বা রিয়েল এস্টেটের তুলনায় ভিন্ন ধরনের অ্যাসেট। ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে দ্রুত মূল্যের পরিবর্তন ঘটে এবং এটি তুলনামূলকভাবে বেশি লাভ এনে দিতে পারে।
অনেক বড় প্রতিষ্ঠান এবং বিনিয়োগকারী ক্রিপ্টোকারেন্সিকে একটি সম্পদ হিসেবে গ্রহণ করেছে। এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠানের (যেমন টেসলা) ব্যালান্স শীটে বিটকয়েন রয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সির গ্রহণযোগ্যতা এবং এর অবকাঠামোর প্রসার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বিনিয়োগকারীদের কাছে এটি আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যা সম্পূর্ণ বিকেন্দ্রীভূত। এর ফলে কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, যা অনেকের কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে। এটি ব্যক্তিগত অর্থের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা প্রদান করে এবং ব্যাংকিং সিস্টেমের বাইরে অর্থ লেনদেনের সুযোগ দেয়।
পরিশষ
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি | ক্রিপ্টোকারেন্সি কি বৈধ | ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে কাজ করে ? এই সম্পর্কে উপরে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে আপনি যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। সকলে ভালো থাকবেন আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url