মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ

মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ জানা প্রয়োজন কারণ প্রতিটি মহিলাই বন্ধ্যাত্বের চিন্তায় ভয় পান। বন্ধ্যাত্ব এমন একটি অবস্থা যখন মহিলা সঙ্গী একাধিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও গর্ভবতী হতে পারে না।বন্ধ্যাত্ব আপনার বা আপনার সঙ্গীর সাথে একটি সমস্যার কারণে হতে পারে অথবা এটি গর্ভাবস্থা প্রতিরোধকারী কারণগুলির সংমিশ্রণের কারণেও হতে পারে।


গর্ভধারণ করতে না পারা আপনাকে নারীত্বের সারমর্ম থেকে বঞ্চিত বোধ করে। প্রতিটি মহিলা তার ব্যক্তিগত আকাঙ্খা, আশা এবং স্বপ্নের উপর ভিত্তি করে বন্ধ্যাত্বের প্রতি তার নিজস্ব উপায়ে প্রতিক্রিয়া জানায়। তবে মূল সারমর্মটি থেকে যায় - একজন মহিলাকে মা হতে বোঝানো হয় এবং শিশুদের জন্য গভীর আকাঙ্ক্ষা থেকে যায়।

আরম্ভ

মহিলা বন্ধ্যাত্ব বলতে একজন মহিলার গর্ভধারণের অক্ষমতাকে বোঝায়। সারা বিশ্বে দিন দিন বন্ধ্যাত্বের শিকার মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বন্ধ্যাত্বের সমস্যা নারী ও পুরুষ উভয়কেই সমানভাবে প্রভাবিত করে।নারীর গর্ভধারণে অক্ষমতাকে নারী বন্ধ্যাত্ব বলে। এক বছর ধরে যৌন মিলনের চেষ্টা করার পরেও যদি কোনও মহিলার গর্ভধারণে সমস্যা হয় তবে এর অর্থ হল সেই মহিলার বন্ধ্যাত্বের সমস্যা হতে পারে।

মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব কী

মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন মহিলা নিয়মিত ও সুরক্ষিত যৌনমিলনের পরেও এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে গর্ভধারণ করতে অক্ষম হন।
মহিলা বন্ধ্যাত্ব বলতে মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব বা বাচ্চা না হওয়া বোঝায়।বন্ধ্যাত্ব সারা বিশ্বের মহিলাদের প্রভাবিত করে, এটি আনুমানিক ৪৮ মিলিয়ন মহিলাকে প্রভাবিত করে।

মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ

মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ অনেকগুলো লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলো হলোঃ
  • অস্বাভাবিক ঋতুচক্রঃ মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ হচ্ছে খুব বেশি বা কম সময় ধরে ঋতুস্রাব হওয়া অথবা একেবারেই ঋতুস্রাব না হওয়া।
  • অনিয়মিত ঋতুচক্রঃ মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ হচ্ছে প্রতি মাসে ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময় না হওয়া।
  • অতিরিক্ত রক্তপাতঃ মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ হচ্ছে ঋতুস্রাবের সময় খুব বেশি পরিমাণ রক্তপাত হওয়া।
  • ঋতুস্রাবের সময় ব্যথাঃ মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ হচ্ছে ঋতুস্রাবের সময় অত্যন্ত ব্যথা হওয়া, যাকে ডিসমেনোরিয়া বলা হয়।
  • শারীরিক পরিবর্তনঃ মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ হচ্ছে ওজন বেড়ে যায়, ত্বকের সমস্যা হয়, চুল পড়ে যায় এবং হরমোনের অস্বাভাবিক লক্ষণ সৃষ্টি হয়।
  • বেদনাদায়ক যৌনমিলনঃ মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ হচ্ছে যৌন মিলনের সময় বা পরে তীব্র ব্যথা অনুভব হয়।
  • হরমোনের পরিবর্তনঃ মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ হচ্ছে গলার স্বর মোটা হয়ে যাওয়া, মুখে এবং শরীরে অতিরিক্ত লোম গজানো এবং বাচ্চা জন্মদানের ক্ষমতার উপর প্রভাব পড়তে পারে।
  • পেলভিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিজঃ মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ হচ্ছে পেলভিক অঞ্চলে সংক্রমণ যা প্রজনন অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে।
  • অ্যান্ডোমেট্রিওসিসঃ মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ হচ্ছে জরায়ুর বাইরে টিস্যুর বৃদ্ধি, যা বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
  • ফ্যালোপিয়ান টিউব ব্লকেজঃ ফ্যালোপিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যাওয়া,যা ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর মিলনে বাধাগ্রস্ত হয়।
আরও পড়ুনঃ গনোরিয়ার হোমিও ঔষধ সম্পর্ক বিস্তারিত জেনে নিন

মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব কেন হয় । মেয়েদের বন্ধ্যাত্ব কিভাবে হয়?

  1. প্রাথমিক বন্ধ্যাত্বঃ যখন একজন মহিলা কখনও গর্ভধারণ করতে সক্ষম হননি।
  2. মাধ্যমিক বন্ধ্যাত্বঃ যখন একজন মহিলা পূর্বে গর্ভধারণ করেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে আর গর্ভধারণ করতে পারেন না।
মহিলাদের বন্ধ্যাত্বের কারণগুলো বিভিন্ন হতে পারে এবং তা প্রজনন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। প্রধান কারণগুলো হলোঃ
  • মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব ডিম্বস্ফোটন, সার্ভিকাল এবং জরায়ুজনিত কারণগুলির পাশাপাশি উচ্চ বয়সও কারণে হতে পারে।
  • জরায়ুর প্রসারণ দ্বারা অনুসৃত গর্ভপাত অন্তঃসত্ত্বার দাগ তৈরি করতে পারে এর ফলে নিষিক্ত ডিম্বাণু রোপনে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
  • ফ্যালোপিয়ান টিউবগুলির মধ্যে এবং আশেপাশে আঠালো পদার্থ ডিম্বাশয় থেকে নির্গত হওয়ার পরে টিউবের ডিম্বাণু গ্রহণের ক্ষমতাকে হস্তক্ষেপ করে। এটি টিউবের মাধ্যমে শুক্রাণুর চলাচলকেও প্রভাবিত করতে পারে।
  • জরায়ুর জন্মগত শারীরবৃত্তীয় বিকৃতি বারবার গর্ভপাত ঘটিয়ে বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। বন্ধ্যাত্বের আরেকটি কারণ হল ডিম্বাশয় তৈরি হয় কিন্তু ডিম থাকে না।
  • ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসৃত না হওয়া। এটি পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম, থাইরয়েডের সমস্যা বা অন্য হরমোনজনিত সমস্যার কারণে হতে পারে।
  • সার্জারির কারণে ফ্যালোপিয়ান টিউব ক্ষতিগ্রস্ত বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  • জরায়ুর বাইরে টিস্যু বৃদ্ধির ফলে প্রজনন অঙ্গগুলির ক্ষতি হতে পারে।
  • জরায়ুর আকার বা গঠনগত ত্রুটি, জরায়ুতে ফাইব্রয়েড বা পলিপ থাকলে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে।
  • সার্জারি, ইনফেকশনের কারণে পেলভিক অঞ্চলে টিস্যু আঠালো হয়ে যেতে পারে, যা প্রজনন অঙ্গগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
  • শরীরের ইমিউন সিস্টেম ডিম্বাণু বা শুক্রাণুর বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।
  • জেনেটিক সমস্যা গর্ভধারণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
  • বয়স বাড়ার সাথে সাথে মহিলাদের ডিম্বাণুর গুণগত মান এবং সংখ্যা কমে যায়, যা বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
  • জরায়ুর কিছু সমস্যা থাকে যা জন্মগত হতে পারে আবার অসুখের কারণে হতে পারে।
  • জন্মগত সমস্যার কারণে হয়ত ডিম আসছে না, তার টিউব ব্লক, জরায়ু যেটা আছে সেটা বাচ্চাদের মতো।
  • কিছু অসুখ আছে, যেমন: ওভারিয়ান সিস্ট, এন্ডোমেট্রিওসিসের কারণে হতে পারে।
  • হরমোনের কারণেও হতে পারে। যেমন থাইরয়েডের সমস্যার কারণে হতে পারে।
  • যৌনবাহিত রোগের কারণে মেয়েদের প্রজনন অঙ্গগুলোর ক্ষতি করে। সেজন্য বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।

মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব কোন ভিটামিনের অভাবে হয়

ভিটামিন ডিঃ ভিটামিন ডি-এর অভাব মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। ভিটামিন ডি-এর পর্যাপ্ত পরিমাণ হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং ডিম্বাণুর উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিভিন্ন পরীক্ষায় উঠে এসেছে, যে সব মহিলার শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব রয়েছে, গর্ভধারণের সময় তাঁর শরীরে জটিলতা কয়েকগুণ বেড়েছে। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে ভিটামিন ডি-এর অভাব স্বাভাবিকভাবে সন্তানধারণে বাধার সৃষ্টিও করে।

বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভিটামিন ডি-এর অভাব মহিলাদের গর্ভধারণের হার কমিয়ে দেয়। স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, ভিটামিন ডি-এর মাত্রা যত বেশি হবে তত উচ্চ মানের ডিম্বাণু উৎপাদিত হবে। ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর নিষেকের পর ভ্রুণ যখন জরায়ুর গায়ে বসে, সেই প্রক্রিয়াতেও ভূমিকা রাখে ভিটামিন ডি। এই ভিটামিনের অভাবে ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণুর পরিমাণও কমে যায়।

ভিটামিন ইঃ ভিটামিন ই-এর পর্যাপ্ত পরিমাণ মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে, এবং এর অভাব বন্ধ্যাত্বের একটি কারণ হতে পারে।

এছাড়াও যদি ঘন ঘন সর্দি, কাশি, জ্বরের মত সমস্যা লেগেই থাকে, শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা থাকে সেখান থেকেও কিন্তু হতে পারে নানা সমস্যা। আর ভিটামিন ই এর ঘাটতি হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।

ভিটামিন-ই কিন্তু চোখের জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ভিটামিনের অভাবে রেটিনায় সমস্যা আসতে পারে। যার ফলে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়।

ফোলিক অ্যাসিডঃ ফোলিক অ্যাসিড এর অভাব গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ফোলিক অ্যাসিড ডিম্বাণু উৎপাদন ও জরায়ুর স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয়।

ভিটামিন বি১২ঃ ভিটামিন বি১২-এর অভাব ওভুলেশনের সমস্যা এবং ডিম্বাণুর গুণমান হ্রাস করতে পারে, যা বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।

মেয়েদের বন্ধ্যাত্ব দূর করার উপায়? মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তির উপায়

  • ওজন নিয়ন্ত্রণঃ স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা জরুরি। ওজন বেশি বা কম হলে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ওজন অতিরিক্ত বা কম থাকলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হতে পারে, যা বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। সঠিক ওজন বজায় রাখতে ব্যায়াম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস পালন করা জরুরি।
  • খাদ্যাভ্যাসঃ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ায়। প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
  • ব্যায়ামঃ নিয়মিত ব্যায়াম শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়ক এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • ধূমপান ও মদ্যপান পরিহারঃ ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।

পরিশেষ

অতিরিক্ত ওজন বা কম ওজন হওয়া একটি সমস্যা হতে পারে। অতএব, একটি আদর্শ ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করুন।আপনি যদি কিছু দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় ভুগছেন, যেমন ডায়াবেটিস, পিরিয়ডন্টাল রোগ ইত্যাদি, তাহলে এটি বন্ধ্যাত্বের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। কিছু ওষুধ বন্ধ্যাত্ব বাড়াতেও বড় ভূমিকা পালন করে।কখনও কখনও ক্যান্সারের চিকিৎসা বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url