মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয় এবং জরায়ুতে টিউমার হলে করণীয় কি ইহা প্রত্যেক মেয়েদেরই জানা প্রয়োজন।প্রজননক্ষম বয়সে নারীদের জরায়ুতে সবচেয়ে বেশি যে টিউমার হতে দেখা যায় তা হলো ফাইব্রয়েড বা মায়োমা। জরায়ুর পেশীর অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে এই টিউমারের সৃষ্টি হয়।
বেশি বয়সে সন্তান ধারণ করতে গিয়ে অনেক নারীই সমস্যার সম্মুখীন হন। আর এই সমস্যার অন্যতম একটি কারণ হলো জরায়ুর টিউমার। বিনাইন টিউমারকে চিকিৎসার ভাষায় বলা হয় ফাইব্রয়েড। সাধারণত ২১-৫০ বছর বয়সী নারীদের জরায়ুতে এই ধরনের টিউমারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
আরম্ভ
জরায়ুর পেশি অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে যে টিউমার হয় তা হলো ফাইব্রয়েড বা সায়োমা। সাধারণত ২১-৫০ বছরের নারীদের মধ্যে জরায়ুতে এই ধরনের টিউমার হয়। ফাইব্রয়েড ক্যান্সার নয়, এক ধরনের টিউমার ।মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয় বা জরায়ুতে টিউমার হলে করণীয় কি বিস্তারিত জানবো।
অনেক সময় জরায়ু গহ্বরে নানা ধরনের টিউমার সৃষ্টি হতে পারে। কোনো কোনো টিউমার থেকে পুঁজ রক্ত বের হতে পারে, আবার কোনো কোনো টিউমার থেকে এই জাতীয় স্রাব নাও হতে পারে। পড়তে থাকুন বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করবো।
মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয়
প্রথমত মেয়েদের জরায়ুর দেওয়ালের বাইরের দিকে টিউমার হয়, যাকে সাব-সেরাস বলে। দ্বিতীয়ত মেয়েদের জরায়ুর দেওয়ালের মধ্যে টিউমার হয়, যাকে ইন্ট্রামিউরাল বলে এবং তৃতীয়ত মেয়েদের জরায়ুর যে অংশ থেকে ঋতুস্রাব হয়, তাকে বলা হয় সাব-মিউকাস।টিউমার বা ফাইব্রয়েড মূলত এই তিন জায়গায় তৈরি হতে পারে।
অনেক মেয়ে সাব-মিউকাস ফাইব্রয়েডে আক্রান্ত হয়। ঋতুস্রাবের সময়ে পেটে তীব্র যন্ত্রণার অন্যতম কারণ হলো এই সাব-মিউকাস ফাইব্রয়েড। এর ফলে অত্যধিক রক্তক্ষরণ হয় এবং অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা শুরু হয়। জরায়ুতে এই টিউমার থাকলে গর্ভপাতের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
অনিয়মিত ঋতুস্রাব, অত্যধিক রক্তপাত ও গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দিলে ফাইব্রয়েড আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। অনেক মেয়েরা ঋতুস্রাবের যন্ত্রণাকে অবহেলা করে, যন্ত্রণা কমাতে ব্যথানাশক ঔষধ খায়। তবে এই অবহেলা বড় বিপদ ডাকতে পারে। অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয়, এই ব্যাপারেও নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
জরায়ু মসৃণ পেশিকোষ দিয়ে তৈরি যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণেই জরায়ুতে ফাইব্রয়েড তৈরি হয়। ডিম্বাশয়ে উৎপন্ন সংবেদনশীল হরমোন ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়লে টিউমারের আকার বাড়ে। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমলে টিউমারের আকার সংকুচিত হয়।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাইনি সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের একটি বড় অংশ মায়োমা বা ফাইব্রয়েড আক্রান্ত।ফাইব্রয়েড হল এক ধরনের টিউমার, যা জরায়ুর মসৃণ পেশি কোষ থেকে তৈরি হয়। প্রজননক্ষম বয়সে এ সমস্যা দেখা দেয়।
আরও পড়ুনঃ থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় বিস্তারিত জেনে নিন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সাবেক প্রধান সালমা রউফ বলেন, ফাইব্রয়েড বেশি বড় হলে তলপেট ভারী লাগে, প্রস্রাব করতে সমস্যা হয়।
ফাইব্রয়েডের কারণে মাসিকের সময় বেশি পরিমাণে রক্ত বেরিয়ে যাওয়ায় রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থা এবং প্রসবেও ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। কারো বেলায় বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়ে উঠতে পারে ফাইব্রয়েড।
প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন নারী ফাইব্রয়েডে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, পেট ব্যথা, কোমরের নিচে ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, সহবাসের সময় ব্যথা বা অস্বস্তিতে ভোগেন।
জরায়ুর ভেতরের দেয়ালে রক্তনালির সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ভ্রূণ ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারে না। সূতরাং মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয় এটি অন্যতম কারণ।
জরায়ু ও ফ্যালোপিয়ান টিউবের সংযোগ স্থলে বা এমন কোনো জায়গায় টিউমারটির অবস্থান হয়, যা ভ্রূণকে সুস্থিত হতে বাধা দেয়। অতএব,মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয় এবং কোথায় হয় বোঝা গেল।
মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয় তার সঠিক উত্তর হলো জরায়ু পেশির উপর অনবরত চাপ পড়া, জোর পড়া।
মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয় তার অন্যতম কারণ হচ্ছে বংশগত কারণ। অবিবাহিত মেয়েদের হওয়ার কারণ সুস্পষ্টভাবে জরায়ু টিউমারের কারণ জানা যায়নি। কিছু ক্ষেত্রে বংশগত, আবার কিছু গ্রোথ ফ্যাক্টর এবং জিনগত কারণকে দায়ী মনে করা হয়। অবিবাহিত বা বিবাহিত মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার হওয়ার জন্য আলাদা কোনো কারণ নেই।
মেয়েদের জরায়ু দেখতে কেমন হয় বা জরায়ু সুস্থ আছে কিভাবে বুঝবো
জরায়ুরতে টিউমার এর ছবি বা জরায়ুর টিউমার দেখতে কেমন
জরায়ুতে টিউমার হলে কি বাচ্চা হয়
জরায়ুতে টিউমার থাকাবস্থায় গর্ভধারণ করতে পারেন। তবে এই টিউমারে মা ও শিশুর বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করতে পারে।
সাব-মিউকাস হলে জটিলতা হতে পারে। কারণ সাব-মিউকাস টিউমার জরায়ুর ভেতরে অবস্থিত হওয়ায় ভ্রূণ ও প্লাসেন্টার স্থাপনকে বাধাগ্রস্ত করে।
গর্ভধারণের কারণে জটিলতা হতে পারে। জরায়ুতে এই টিউমার থাকলে জরায়ু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিউমারের আকার পরিবর্তন হতে পারে। অনেক সময় টিউমারের মধ্যে রক্তক্ষরণ ও পানি জমে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।সূতরাং মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার হলে কি রক্ত যায়? অতএব এই প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয়ই পেয়ে গেছেন।
শিশুর ওজন কমে যায়, প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল সময়ের আগে ডেলিভারি হওয়ার জটিলতা দেখা দিতে পারে।
টিউমার ফাইব্রয়েডের কারণে নরমাল ডেলিভারির পথ বাধাগ্রস্ত হয় এবং সিজারের প্রয়োজন হতে পারে।
জরায়ুতে টিউমার এর লক্ষণ বা জরায়ুর মুখে টিউমারের লক্ষণ
জরায়ুতে টিউমার হলে যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে অথবা জরায়ুতে টিউমার হলে
কি কি সমস্যা হতে পারে অথবা জরায়ুতে টিউমার হলে কি হয়? এমনকি জরায়ুর মুখে টিউমারের লক্ষণ কি এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত নিম্নে দেয়া হলো-
ঋতুস্রাবের সমস্যাঃঋতুস্রাব শুরু থেকে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু জরায়ুতে টিউমার হলে ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত হয়ে রক্তপাতের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং চাকা চাকা রক্তপাত হতে পারে।
ব্যথাযুক্ত ও অতিরিক্ত রক্তস্রাবঃ টিউমারের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্তক্ষরণ হয়। কখনো কখনো অত্যধিক ব্যথা অনুভূত হয়। ফলে রক্তে আয়রনের পরিমাণ কমে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার হলে কি রক্ত যায়? অতএব এই প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয়ই বুঝতে আর বাকি থাকার কথা নয়।
বন্ধ্যত্ব বা গর্ভপাতঃ জরায়ুর অভ্যন্তরীণ অংশে ফাইব্রয়েড হলে তা ফেলোপিয়ান টিউবকে বন্ধ করে দেয়, যা গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টির মাধ্যমে বন্ধ্যত্বের কারণ হয়। আবার কখনো ফাইব্রয়েডের কারণে গর্ভপাত হতে পারে।
ঘন ঘন প্রস্রাবঃ ফাইব্রয়েড জরায়ুর সামনে অবস্থিত মূত্রথলিতে চাপ সৃষ্টি করলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্যঃ ফাইব্রয়েড জরায়ুর পেছনে অবস্থিত অন্ত্রে চাপ সৃষ্টি করার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
সহবাসকালীন ব্যথাঃ ভ্যাজাইনা বা যোনি অথবা জরায়ুমুখে টিউমার হলে সহবাসের সময় অস্বস্তি বা ব্যথা হতে পারে।
তলপেট ফোলা বা কোমরব্যথাঃ বড় আকারের টিউমারের ক্ষেত্রে অস্বস্তিসহ তলপেট ফুলতে পারে। কোনো কোনো সময় ফাইব্রয়েডের জন্য কোমরব্যথা হতে পারে।
জরায়ুতে টিউমার হলে করণীয়
টিউমারের প্রধান চিকিৎসা মূলত অস্ত্রোপচার বা অপারেশন। ওষুধের মাধ্যমে এর কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই। অস্ত্রোপচার প্রধানত দুই ধরনের।যেমনঃ
১। জরায়ু কেটে ফেলে দেওয়া
২। জরায়ুর দেয়াল থেকে ফাইব্রয়েড কেটে তুলে ফেলা।
বর্তমানে দুটি পদ্ধতিতে জরায়ুর টিউমারের অপারেশন করা হয়- ছিদ্র করে এবং পেট কেটে। এই দুই ধরনের অস্ত্রোপচারে রক্তপাত হয়ে থাকে। অনেকক্ষেত্রে প্রচলিত অপারেশনর সময় জরায়ু কেটে ফেলা হয়।
তাছাড়া এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায় । তবে আশার কথা হল জরায়ু টিউমারের চিকিৎসায় যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে লেজার সার্জারি। এই পদ্ধতিতে কাটা-ছেড়া ও রক্তপাতহীনভাবে লেজারের মাধ্যমে ল্যাপ্রোস্কোপ এবং গজও গাইডেন্সে জরায়ু টিউমারের চিকিৎসা করা সম্ভব হয়েছে।
অত্যাধুনিক এই চিকিৎসা পদ্ধতি ম্যাগনেটিক রিজোনেন্স ইমেজ বা লেজার আবলাশন নামে পরিচিত। কাটা-ছেঁড়া ছাড়া, রক্তপাতহীন ও ঝুঁকিমুক্তভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলার এই চিকিৎসা উন্নত দেশের মতো এখন বাংলাদেশেও হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে জরায়ু অপসারণ বা কেটে না ফেলে নারীত্ব ও মাতৃত্ব অক্ষুন্ন রেখে স্বল্প সময়ে টিউমার থেকে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
গর্ভাবস্থায় টিউমারের জটিলতা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এছাড়াও হোমিও চিকিৎসাতে জরায়ু টিউমার দূর করা সম্ভব হচ্ছে।
জরায়ু টিউমার প্রতিরোধের উপায় কি এবং জরায়ুতে টিউমার হলে করণীয় কি এগুলো প্রশ্নের সোজা সাপ্টা উত্তর হচ্ছে সচেতনতা অবলম্বন করা।
পরিশেষ
পরিশেষে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে যে, মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয় বা জরায়ুতে টিউমার হলে করণীয় কি এ বিষয়গুলো জানানোর চেষ্টা করেছি। সূতরাং সচেতন হন সুস্থ থাকুন এই শুভকামনা রইল।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url