চোখ চুলকানির হোমিও ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

চোখ চুলকানির হোমিও ঔষধ সম্পর্কে প্রত্যেকের জানা প্রয়োজন। চোখ চুলকানির সমস্যা বারবার ঘুরে ফিরে আসে। চোখ চুলকানির হোমিও ঔষধ দিয়ে প্রকৃতভাবে চোখ চুলকানি নির্মূল হওয়া সম্ভব। শরীরে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান প্রবেশ করলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। যেমনঃ চোখ চুলকানি, চোখ জ্বালা, চোখ লাল হওয়া, চাকা চাকা ফুসকুড়ি, হাঁচি, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি।

অ্যালার্জি থেকে দূরে থাকা কঠিন। চলার পথে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানের প্রবেশ ঘটবে। চোখ চুলকানি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হোমিও ঔষধের কোন বিকল্প নেই।সূতরাং চোখ চুলকানির হাত হতে নিষ্কৃতি পেতে চোখ চুলকানির হোমিও ঔষধ সেবন করুন।

আরম্ভ

চোখ চুলকানির লক্ষণগুলোর জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন, যদি ডাক্তারের শরণাপন্ন না হন তবে বিভিন্ন লক্ষণগুলোর উপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করে রোগের চিকিৎসা করবেন। দীর্ঘমেয়াদি রোগে রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাস নিয়ে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করলে চোখ চুলকানি নির্মূল হওয়া সম্ভব।সূতরাং চোখ চুলকানির হোমিও ঔষধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

চোখ চুলকানির হোমিও ঔষধ

  • এপিস মেল(Apis Mel)
তীব্র ও যন্ত্রণাদায়ক অ্যালার্জিগুলোর চিকিৎসা এপিস মেল দ্বারা হয়ে থাকে। চোখের নিচের পাতা ফুলে থাকে। চোখ থেকে স্রাব বেরিয়ে আসে। চোখের সাদা অংশ গোলাপি লাল হুল ফোটানো ব্যথা,চুলকানি, জ্বালা ও আলোর দিকে তাকাইতে পারে না। পিছুটিতে চোখ জুড়িয়ে থাকে। জল প্রয়োগে যন্ত্রণার উপশম প্রভৃতি লক্ষণে এপিস মেল অব্যর্থ।
  • রুটা(Ruta)
অনেক দিন লেখাপড়া বা সেলাই কাজ করে চোখ বেদনা, জ্বালা, লাল,চুলকানি ও গরম হলে রুটা কার্যকারী। যখন চোখে কিছু পড়েছে বা ধুলো বালি পড়ে আছে,চোখে ব্যথা করে এবং লাল হয়ে যায় তখন রুটা ওষুধটি ব্যবহার করা হয়।
  • পালসেটিলা (Pulsatilla)
রোগীর এলার্জির লক্ষণের মধ্যে চুলকানি, চোখের পাতা ফোলা, চোখ দিয়ে হলুদের মত পাতলা পানি বের হওয়া, চোখ জ্বালা করা, মনে হয় চোখের পাতাগুলোর মধ্যে দানা বেঁধে আছে। রোগীর গরম পছন্দ নয়, গরমে বা উত্তাপে রোগ বৃদ্ধি হয় এবং বাতাসে পছন্দ এরূপ লক্ষণে পালসেটিলা সেবন করুন। 

  • আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম (Argentum Nitricum)
চক্ষু লাল, জ্বাল্‌ যন্ত্রণা, চুলকানি,আলোর দিকে তাকাইতে পারেনা। হলুদ রঙের পিছুটিতে চোখ জুড়িয়ে থাকে। চোখের ভেতর ক্ষতের মত দেখা যায় ইত্যাদি লক্ষণে ইহা কার্যকারী।বেশি মিষ্টি খাওয়ার জন্য এলার্জি হলে আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম উপকারী। আর্জেন্টাম নাইট্রিকামের রোগীরা মিষ্টি, বিশেষ করে চিনি পছন্দ করে, সেই মিষ্টি রোগীর রোগকে বৃদ্ধি করে। এক্ষেত্রে আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম ব্যবহার করা হয়।
  • সালফার (Sulphur) 
চোখ চুলকানির হোমিও ঔষধ এর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔষধ হল সালফার।এলার্জিতে সালফার ভালো কাজ করে। সালফারের প্রধান প্রধান লক্ষণগুলো এলার্জি অবস্থায় চোখ লাল হয়ে যায়, রাতে ও গরমে বৃদ্ধি পায়, মাথা গরম কিন্তু পা ঠান্ডা, মাথার তালু-পায়ের তালুসহ শরীরে জ্বালাপোড়া ইত্যাদি পাওয়া গেলে অবশ্যই সালফার প্রয়োগ করতে হবে।

জ্বালা, ব্যথা এবং চুলকানিসহ চোখের সাদা অংশ রক্তের মত দেখায়। চোখের পানি গরম হয়, তাপে এবং আলোতে চোখের সমস্যা বৃদ্ধি পায়,সকালে চোখের পাতা সংকুচিত হয়। অলস ব্যক্তি, অপরিচ্ছন্ন, পোশাকের যত্ন নেয় না, গোসল করতে ভালো লাগে না, গোসল করলে রোগ বৃদ্ধি পায়। সব সময় চর্মরোগ থাকে, চুলকাতে ভালো লাগে, চুলকালে উপশম হয় কিন্তু চুলকানোর পরে জ্বালা করে।

  • আর্সেনিক (Arsenic Album)
অবিরত হাঁচি, চোখ জ্বলে ও পানি পড়ে, অস্থিরতা, ঠান্ডায় বৃদ্ধি, গরমে উপশম, ঘনঘন অল্প অল্প পানি পান করে এমনকি ঠান্ডা পানীয়, ফল, পচা খাবার থেকে এলার্জিতে আর্সেনিক কার্যকরী ঔষধ। যাদের গরুর মাংসের প্রচন্ড এলার্জি, প্রচুর চুলকায়, ঝিন ঝিন করে জ্বালা, গরম সেক দিলে উপশম হয় এরূপ লক্ষণে আর্সেনিক এলবাম উপকারী।
  • কার্বো ভেজ (Carbo Veg)
খারাপ মদ, পচা-বাসী খাবার, লবণ, মাংস, মাখন, ডিম প্রভৃতি থেকে সৃষ্ট এলার্জিতে কার্বোভেজ কার্যকরী। এছাড়াও গরমে বৃদ্ধি, শীত অপছন্দ, যে সকল খাদ্যতে রোগের সৃষ্টি হয় রোগী সেগুলোই খেতে চায় ইত্যাদি লক্ষণে কার্বোভেজ উপকারী।
  • নেট্রাম মিউর (Natrum Mur)
অতিরিক্ত লবন প্রিয়দের এলার্জিতে নেট্রাম মিউর একটি কার্যকরী ঔষধ। নেট্রাম মিউরের এলার্জির ক্ষেত্রে অন্যতম লক্ষণ হল হাঁচি এবং গলা আর কান বেশি চুলকায়। নেট্রাম মিউরের রোগী অত্যন্ত আবেগপ্রবণ, খিটখিটে প্রকৃতির এবং যখন মন খারাপ থাকে তখন কারো উপস্থিতি বা কোন সান্ত্বনা দেওয়া পছন্দ করে না। উপর্যুক্ত লক্ষণে নেট্রাম মিউর চোখ চুলকানির হোমিও ওষুধ হিসেবে শ্রেষ্ঠ কার্যকারী।
  • আর্টিকা ইউরেন্স (Urtica Urens)
চিংড়ি খেয়ে সৃষ্ট এলার্জি শুইলে মিলিয়ে যায়, বিছানা থেকে উঠলেই আবার বের হয়,চোখ চুলকালে ফুলে যায়, এরূপ লক্ষণে আর্টিকা ইউরেন্স একটি চমৎকার ও কার্যকরী ঔষধ।

  • ডালকামারা (Dulcamara)
ঠান্ডা আবহাওয়া এবং আদ্র আবহাওয়ার কারণে এলার্জি কিংবা চোখ চুলকানি হলে ডালকামারা অতি কার্যকরী।
  • সোরিনাম (Psorinum)
নোংরা প্রকৃতির এবং গম জাতীয় খাবার খেয়ে এলার্জি বা চোখ চুলকানি হলে সোরিনাম। শরীরে অসহ্য চুলকানি, বিছানার গরমে বৃদ্ধি, চুলকাতে চুলকাতে রক্ত বের হয়।চুলকানির পর ঠান্ডা মুক্ত বাতাস চায়। ঠান্ডা বাতাসে, শীতের শুস্ক ঠান্ডায়, আবহাওয়া পরিবর্তনে রোগ বৃদ্ধি, বিছানার উত্তাপ সহ্য হয় না। এই রূপ লক্ষণে চোখ চুলকানির হোমিও ঔষধ হিসেবে সোরিনাম শ্রেষ্ঠ কার্যকারী।
  • থুজা (Thuja)
মিষ্টি, চর্বিযুক্ত খাবার, পেঁয়াজ থেকে সৃষ্ট এলার্জিতে চোখ চুলকানির হোমিও ঔষধ উত্তম থুজা কার্যকরী।

  • সিপিয়া (Sepia)
গরম দুধ থেকে এলার্জ বা চোখ চুলকানি এবং গরম বা উত্তাপে তা মিলিয়ে যায় এতে সিপিয়া শ্রেষ্ঠ কার্যকরী।

পরিশেষ

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে চোখ চুলকানিসহ এলার্জিতে করলার রস ১০ ফোটা এবং লেবুর রস ৫ ফোটা করে দিনে দুইবার করে ১৫ দিন সেবন করুন। 

আশা করা যায় এলার্জিজনিত চোখ চুলকানি হতে রক্ষা পাবেন।দীর্ঘমেয়াদি রোগে রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাস নিয়ে লক্ষণ অনুযায়ী সালফার, পালস, ন্যাট মিউর, সিপিয়া, থুজা ইত্যাদি ধাতুগত অ্যান্টিমায়াজমেটিক ওষুধের সাহায্য নিলে দীর্ঘস্থায়ী উপকার পাওয়া সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url