সন্দেহ রোগ থেকে মুক্তির উপায় - মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় জানুন

সন্দেহ রোগ থেকে মুক্তির উপায় অথবা মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় জানা প্রত্যেকের প্রয়োজন।আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে গতিশীল জীবনে মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুকের জন্যে বাড়ছে পরিচিতমণ্ডল। বাড়ছে অপ্রয়োজনীয় সম্পর্ক, বাড়ছে নেতিবাচক আবেগ ও অনুভূতি। যা অন্যান্য সর্ম্পকগুলোর পাশাপাশি বৈবাহিক সম্পর্কেও টানাপোড়েন সৃষ্টি করছে।
স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সুখের সম্পর্ক ছোট ছোট কিছু ভুলে দিন পর দিন তিক্ত হয়ে যাচ্ছে।একই ছাদের নীচে বসবাস করলেও স্বামী-স্ত্রী যেনো থাকেন যোজন যোজন দূরে। যে কোনো সম্পর্কের সবচাইতে মূল্যবান ভিত হচ্ছে “বিশ্বাস”। যেটা যে কোনো সম্পর্কেই অত্যন্ত জরুরি। বিশ্বাস না থাকলে সেখানে সম্পর্কের অস্তিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্বাস যখন থাকে না তখন দেখা দেয় সন্দেহপ্রবণতা।

আরম্ভ

সন্দেহ রোগ থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে আপনার স্বামী বা স্ত্রীর উপরে বিশ্বাস রাখুন। বিশ্বাসের উপরেই টিকে থাকে একটা সম্পর্কের স্থায়িত্ব। আপনি যখনি ভালোবাসার মানুষটিকে মন থেকে বিশ্বাস করবেন দেখবেন এসব সন্দেহ আপনার ধারে কাছেও আসবে না। তাই একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। একে অন্যের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। তাহলেই আর এসব সন্দেহ মনে বাসা বাঁধতে পারবেন না।

স্বামী বা স্ত্রী যদি আপনাকে অহেতুক সন্দেহ করে তাহলে রেগে না গিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করা শিখুন। তার কথায় কান না দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলুন, তাকে পাত্তা না দিয়ে মনকে শক্ত করুন। পরিস্থিতিকে সময়ের উপর ছেড়ে দিন। এই সব পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে চুপ করে থাকলে সময়ের কারণে এসব অমূলক সন্দেহ এমনি এমনি দূর হয়ে যাবে।

সন্দেহ রোগ কী

সন্দেহ হলো কোনো কিছুর অনিশ্চয়কর বিশ্বাস বা জ্ঞানের অভাব বা আত্মসংশয়ের স্থিতি। সন্দেহের সময় একজন ব্যক্তি কোনো নির্দিষ্ট মূল্যায়ন করতে সক্ষম হয় না এবং সত্য বা মিথ্যা নির্ধারণ করতে পারে না। সন্দেহ করা একটি মানসিক অবস্থা যা কোনো সমস্যার সমাধানে অবসান পেতে সাহায্য করতে পারে।

মানসিক রোগ কী?

মানুষের অস্বাভাবিক আচরণ, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং পশুর মতো আচরণ করার বৈশিষ্ট্য সমূহকে মানসিক রোগ বলে।

মানুষের শরীর, মন এবং ব্যক্তিগত জটিল পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে স্বাভাবিক আচরণের পরিবর্তন, মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ রোধ এবং সেই সাথে কর্ম দক্ষতার বিপর্যয় দেখতে পাওয়াকে মানসিক রোগ বলে।

কেননা আপনি যদি পাগলকে পাগল বলেন তাহলে অবশ্যই আপনার ও মানসিক রোগের একটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হবে, যেটা মোটেও ভালো নয়। কেননা অবশ্যই আপনাকে বিবেক-বুদ্ধির সম্পন্ন হতে হবে মানসিক রোগে থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এবং নিজেকে মানসিক রোগী চিহ্নিত না করার জন্য।

আপনি যদি পাগলকে পাগল বলেন তাহলে দেখা যাবে যে আপনার সামাজিক মূল্যবোধ বা ব্যক্তিত্ব অনেক বেশি অভাব রয়েছে।এই অভাবের কারণে আপনাকে মানসিক রোগী বলে অবহিত করা যাবে তাই সাবধানে থাকুন এবং বিরত থেকে সঠিক কথা বলতে শিখুন।

মানসিক রোগীর লক্ষণ

মানসিক বলতে আমরা কোনো ব্যাক্তির অস্বাভাবিক আচারণকে বুঝায়। কোনো ব্যাক্তি মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ছে কি না তা তার আচার-আচরণ মাঝেই বুঝা সম্ভব। নিম্নোক্ত কিছু মানসিক রোগের লক্ষণ তুলে ধরা হলো

  • সকলের সাথে অস্বাভাবিক ভাবে কড়া মেজাজে কথা বলা।
  • সকলের থেকে নিজেকে অনেক দিন যাবত গুটিয়ে রাখা।
  • কেউ ডাকলে দেরিতে বা না সাড়া দেওয়া।
  • কথা বলার মাঝে অকারণে উত্তেজিত হয়ে উঠা।
  • একটানা দুই সপ্তাহের বেশি মন খারাবে ভুগা।
  • যেকোনো কাজে অমনোযোগী এবং কাজে অনিহা।
  • প্রতিদিনের সকল প্রয়োজনীয় কাজে অমনোযোগী।
  • সকল সামাজিক কাজে অংশ গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত থাকা।
  • নিয়মিত সময়ে না ঘুমানো এবং দেরিতে ঘুম থেকে উঠা।
  • প্রতিদিন ব্রাশ এবং স্নানে অবহেলা করা।
  • সমাজ থেকে দূরে গিয়ে বসবাস করতে চাওয়া এমন মনোভাব সৃষ্টি হওয়া।
  • সকল কাজে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পাওয়া।
  • প্রতিদিনের কাজকর্মের অনিহা এবং খাবারের প্রতি অরুচি দিন দিন বৃদ্ধি।
  • সারাক্ষণ খারাপ চিন্তা-ভাবনা মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকা।
  • মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণ।

মানসিক রোগীর শারীরিক লক্ষণ

যে সকল লক্ষণ দ্বারা আপনি বুঝতে পারবেন যে মানসিক রোগ হয়েছে কিনা সে সকল লক্ষণ আমরা জানবো।মানসিক রোগীর আচরণগত লক্ষণ সহ কতিপয় শারীরিক লক্ষণ দেয়া হলো

  • খিচুনি হওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, এবং শরীরের একপাশ অবশ হয়ে যাওয়া।
  • হাঁটতে না পারা, শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়া এবং ঘন ঘন দম নেওয়া।
  • কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন এবং অতি তুচ্ছ বিষয় রাগান্বিত হওয়া।
  • পরিস্থিতি অনুযায়ী কথা বলতে না পারা এবং অস্বাভাবিক কাণ্ডকলাপ করা।
  • আবার কেউ আপনাকে মেরে ফেলবে অযথা এমনটা মনে করা মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণ।
  • অকারণে আবোল তাবোল কথা নিজে নিজে বলতে থাকা।
  • যে কারো সাথে মিশতে না পারা বা মিশতে না চাওয়া।

এগুলো হলো মানসিক রোগীর লক্ষণ এবং এ লক্ষণ গুলো দেখার মাধ্যমে আমরা মানসিক রোগীকে চিহ্নিত করতে পারি। আর অবশ্যই এই রোগের কিছু কারণ রয়েছে যে কারণগুলোর জন্য মানুষ মানসিকভাবে আক্রান্ত হয় এবং মানসিকভাবে অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে।

মানসিক রোগের কারণ

আমরা তো মানসিক রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানলাম। আর এখন আমাদের উচিত হবে মানসিক রোগ কি কারণে হয় সে কারণগুলো সম্পর্কে কিছু জ্ঞান অর্জন করা। মানুষ নানা কারণে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়, নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ উপস্থাপন করা হলো:

  • জটিল বিষয়ে অধিক চিন্তাভাবনা করার কারণে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়।
  • কটু কথা বা মনে আঘাত লাগার মত কথা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার কারণে।
  • দীর্ঘ সময় ধরে অতীত থেকে ঘটে আসা খারাপ বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করার কারণে।
  • অযথা নিজের মেধাকে খরচ করে সর্বদা একটি বিষয়ের উপর নিজেকে ধরে রাখার কারণে।
  • বিভিন্ন ঔষধের পার্শ্ববর্তীক্রিয়ার কারণে মানসিক রোগ হতে পারে।
  • আঘাত ওজনের তা বিভিন্ন কারণে ও স্ট্রোক হওয়ার কারণে।
  • বিভিন্ন প্রকার রোগের কারণে মানসিক রোগ দেখা দেয় বা স্মৃতিশক্তি লোভ পায়।

এগুলো হলো মানসিক রোগের কিছু কারণ এবং এই কারণগুলোর জন্যই মূলত অধিকাংশ ব্যক্তি মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। আর মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে মানসিক রোগ দেখা দেয়।

মানসিক রোগের প্রকারভেদ

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব সাথে সামাজিক জীবও তাই সামাজিক বসবাসরত অবস্থায় নানা ধরনের বাধাবিপত্তি মধ্যে দিয়ে যাইতে হয়, অধিক কাজের চাপ, সাংসারিক দুর্চিন্তা,ইত্যাদি কারণে একজন সুস্থ মানুষ স্বাভাবিক আচরণ থেকে দূরে সরে যায়, যার ফলে তার আচরণ সমাজের চোখে উঠে অস্বাভাবিক। মানুসিক রোগ বলে কিছু নেই কেবল একটি সুস্থ মানুষের অস্বাভাবিক আচরণের প্রতিছবি মাত্র।

আস্বাভবিক আচার-আচরণ আবার প্রথম পযার্য়ে অল্প মাত্রায় থাকে তেমন কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা যায় না কিন্তু এমন অবস্থায় কোনো সুচিকিৎসা না হলে অস্বাভাবিক আচনের অতি উচ্চমাত্রার রূপ ধারণ করে। তখন আর কোনো কিছু ব্যাক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকে না। অবশেষে কোনো মেন্টাল হসপিটালে নিতে হয়। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে মানসিক রোগকে মূলত দুইটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।

১, নিউরোটিক

২,সাইকোসিস

  • নিউরোটিক মানসিক সমস্যা
মানসিক রোগের একটি সাধারণ পর্যায়ে পড়ে। পৃথিবীতে এই রোগের শিকার লক্ষাধিক ব্যাক্তি। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব সাথে সামাজিক জীবও তাই সামাজিক বসবাসরত অবস্থায় নানা ধরনের বাধাবিপত্তি মধ্যে দিয়ে যাইতে হয়, অধিক কাজের চাপ, সাংসারিক দুর্চিন্তা ইত্যাদি কারণে একজন সুস্থ মানুষ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক আচরণ থেকে দূরে সরে যায়, যার ফলে তার আচরণ সমাজের চোখে উঠে অস্বাভাবিক।
  • সাইকোসিস মানসিক সমস্যা
মানসিক সমস্যা গুলোর মধ্যে এটি একটি ভয়ানক সমস্যা হলো সাইকোসিস মানসিক সমস্যা। এই সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া সমম্ভ নয়। সাইকোসিস সমস্যা মূলত হয়ে থাকে একটি সুস্থ সম্পর্কের কনভারসন ডিস-অর্ডারের এর ফলে সাথে সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি। বাংলাদেশের এই রোগীর সংখ্যা তুলনা মূলকভাবে একটু বেশি বলা চলে এদেশে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক ব্যাক্তি এ রোগে আক্রান্ত।

এই রোগের সঠিক কারণ এখনো পর্যন্ত আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি তবে বিশেষজ্ঞরা এই সাইকোসিস রোগের কারণ হিসেবে নানা কারণ চিহ্নিত করেছে, বংশগত সমস্যা, জেনেটিক সমস্যা, অধিক দিন মাদকে আসক্ত , পরিবেশের বিরূপ প্রভাব,মস্তিষ্কের গঠনের আকৃতি সমস্যার, কিডনিজনিত সমস্যা, দীর্ঘদিন যাবত পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, দীর্ঘদিন যাবত অতিরিক্ত কাজের চাপে রাখলে।

এছাড়াও দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পেলে, মৃগীরোগ, ব্রেইনে টিউমারের সমস্যা, ডায়াবেটিকস ইত্যাদি করণ চিহ্নিত করেছে সাইকোসিস মেন্টাল সমস্যার রোগের কারণ হিসেবে।

সন্দেহ রোগ থেকে মুক্তির উপায়

  • সন্দেহের প্রবণতা দূর করা
বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের যুগ, দিনে দিনে বাড়ছে অপ্রয়োজনীয় সম্পর্ক। দিন দিন দেখা দিচ্ছে সম্পর্কে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা। স্বামী স্ত্রী ভালোবাসার মধ্যে তৈরি হচ্ছে বিভেদ। অল্প কিছুতেই সম্পর্কে টানাপোড়া পড়ে যাচ্ছে। এর মূল কারণে হচ্ছে সন্দেহ প্রবণতা। ওডিসির সমস্যার করণেও সন্দেহ প্রবনতা দিনে দিনে বৃদ্ধি পায়। আমাদের অধিকাংশ সন্দেহ অযৌক্তিক।
  • সন্দেহের যৌক্তিকতা
প্রথমে আমাদের বিবেচনা করতে হবে, যে কারণে আমি সন্দেহ করছি তার সেই বিষয়ে কতটুকু যৌক্তিকতা রয়েছে। আমি কেন সেই বিষয়ে সন্দেহ করছি কারণে না নাকি অকারণে এটি আগে চিহ্নিত করতে হবে।
  • সন্দেহ প্রবণতা চিহ্নিত করণ
আমি কি একজনকে সন্দেহ করছি নাকি সকলকেই সন্দেহ করছি সেইটা চিহ্নিত করতে হবে। কেবল সন্দেহ প্রবণতার কারণেই হাজারো সম্পর্কে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তাই আমাদের নিজেদের বা প্রিয় মানুষদের মাঝে সন্দেহ প্রবণতা আছে কিনা তা চিহ্নিত করতে হবে।
  • কাউন্সিলের আওতায় আনতে হবে
যদি কোনো কারণে সন্দেহ প্রবণতার উপস্থিত লক্ষ্য করা যায়, তাহলে তাকে সন্দেহ প্রবণতার কুফল সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝাতে হবে। প্রয়োজনে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ বা কাউন্সিলের আওতায় আনতে হবে। তাই সন্দেহ প্রবণতার কুফল সম্পর্কে সকলকেই সচেতন করতে হবে। সকল সম্পর্কের মঝেই ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে।
  • মানসিক স্বাস্থ্য সেবা
সন্দেহ রোগ থেকে মুক্তির জন্য প্রথমত, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এটি একজন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদার দ্বারা পরামর্শ নেওয়া হতে পারে। সন্দেহ রোগ থেকে মুক্তির উপায় এর মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
  • মানসিক শান্তি ও ধ্যান
মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করার জন্য ধ্যান ও মানসিক শান্তি অনুভব করা গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক শান্তি সাধনে যেসব ধ্যান প্রক্রিয়া সাহায্যকারী হতে পারে তা অনুশন্ধান করা যেতে পারে, যেমন যোগাযোগ, মনোনিবিষ্ট ধ্যান, ও যোগাযোগ কৌশল তাড়াতাড়ি উন্নত করা।
  • সময় পরিচালনা
সময় পরিচালনা এবং শ্রম ব্যবস্থাপনা শেখা সন্দেহ রোগ থেকে মুক্তি অনুভব করার জন্য সাহায্য করতে পারে। সঠিক পরিচালনা এবং শ্রম ব্যবস্থাপনা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যে উন্নতি আনতে সাহায্য করতে পারে।
স্বাস্থ্যকর খাবার খেওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা সন্দেহ রোগ থেকে মুক্তি অনুভব করতে সাহায্য করতে পারে। এটি মানসিক স্বাস্থ্যে সুস্থ এবং শক্তিশালী অনুভব করার সাথে সাথে সার্থক হতে সাহায্য করতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ব্যায়াম হচ্ছে  সন্দেহ রোগ থেকে মুক্তির উপায়।
  • সাথে পরিবার এবং স্নেহপূর্ণ সমর্থন
আপনার পরিবারের সদস্যরা এবং স্নেহপূর্ণ সমর্থন আপনার সন্দেহ রোগ থেকে মুক্তি অনুভব করতে সাহায্য করতে পারে। তাদের সাথে সাময়িক এবং সমর্থনমূলক যোগাযোগ স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ।পরিবার এবং স্নেহপূর্ণ সমর্থন সন্দেহ রোগ থেকে মুক্তির উপায়।
  • চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসরণ করুন
সন্দেহ রোগ একটি জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন সহ একটি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা পেতে সাহায্য করে। এই সুস্থ জীবনধারা সম্পর্কে আপনার চিকিৎসকের সাথে আলাপ করুন এবং তার নির্দেশনা অনুসরণ করুন।

মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায়

মানসিক রোগ আমাদের স্বাভাবিক জীবন চলার পথে একটি অন্তরায়। এটি নানাভাবে আমাদের দৈনন্দিন আনন্দের মুহূর্তগুলো নষ্ট করে দেয়। এই অংশে আমরা মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানাবো।
  • পরিস্থিতি এড়িয়ে না যাওয়া
যেকোনো পরিস্থি এড়িয়ে না গিয়ে বরং সেটাকে মোকাবিলা করে সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আগামী দিনগুলো অতিবাহিত করা উচিৎ। এতে করে আমরা নিজেদের মাঝে একটা আত্মবিশ্বাস ও আত্মতৃপ্তি পাবো। ফলে মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় খুজে পাবো।
  • বর্তমানে মনোযোগ দেওয়া
মানুষেরা স্বভাবতই অতীত ও ভবিষ্যত নিয়ে বেশি চিন্তা করতে থাকি। অতীতের নানা রকম পাওয়া, না-পাওয়ার হিসাব আমাদেরকে আফসোস করায়। এতে নানারকম দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। এগুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
  • পর্যাপ্ত ঘুম করুন
মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম খুবই দরকারী। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই শরীর ও মন সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে মানসিক ক্লান্তি ও বিষাদও দূর হবে।
  • আপনজনদের সাথে সঙ্গ দিন
একাকিত্ব মানুষকে মানসিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করুন সবসময় ভালো মানুষদের সাথে থাকুন। সকলের সাথে হাসিখুশি আচরণ করলে এটা আপনাকে মানসিক তৃপ্তি দিবে এবং আপনি বিচলিত হবেন না বরং প্রতিকূল অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
  • সৃজনশীল ও কর্মঠ হয়ে উঠুন
সৃজনশীলতা মানুষকে নতুন কিছু সৃষ্টিতে সাহায্য করে। আর মানুষ নিজে কিছু সৃষ্টি করতে পারলে আনন্দিত হয় এবং তৃপ্তি পায়। এতে করে নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রাখা সম্ভব এবং অন্যান্য দুশ্চিন্তা থেকে দূরে রাখা সম্ভব।
  • মানুষকে সঙ্গ দেওয়া
একাকিত্ব মানুষকে মানসিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করুন সবসময় ভালো মানুষদের সাথে থাকুন। সকলের সাথে হাসিখুশি আচরণ করলে এটা আপনাকে মানসিক তৃপ্তি দিবে এবং আপনি বিচলিত হবেন না বরং প্রতিকূল অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
  • ক্ষমা করতে শিখুন
মনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ জমিয়ে রাখবেন না। একটা সময় পর এই সমস্যাটি আপনাকে মানসিক চাপে ফেলতে পারে। মনে রাখবেন, যে কেউ ভুল করতে পারে—এমনকি আপনিও প্রায় সময় ভুল করেন। ভুল করা আমাদের জীবনের একটি অংশ! আর তাই সেই ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন এবং কেউ ভুল করলে তাকে ক্ষমা করে দিন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন
সু-স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল—প্রচলিত এই কথাটি একদমই সত্য। আর শারীরিক ভাবে ভালো ও ফিট থাকার জন্য নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন। হতে পারে সেটা প্রতিদিন সকালে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি অথবা কোন জিমে ভর্তি হয়ে নিয়মিত ব্যায়াম করা।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খান
আপনার শরীর সব ধরনের পুষ্টি পাচ্ছে কি না সেটা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের পুষ্টিকর খাবারই পরিমিতভাবে গ্রহণ করুন।
  • মানসিক চাপ কমান
‘মানসিক চাপ’ শব্দটি অনেক সহজ মনে হলেও আমাদের জীবনে এই শব্দটির প্রভাব অনেক গুরুতর। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ করে এটা আমাদের জীবনকে রীতিমত দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। আপনি চাইলে মানসিক চাপ কমিয়ে নিয়ে আসতে পারেন।
  • ধূমপান এবং মাদক থেকে দূরে থাকুন
মদ্যপান, ধূমপান এবং মাদক এই তিনটি জিনসই শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অনেকেই মানসিক চাপ অনুভব করলে ধূমপান করে থাকেন, তবে এই অভ্যাসটি আপনার ভালো তো করে না বরং অনেক বেশি ক্ষতি করে ফেলে।
মনে রাখবেন আপনার জীবনের সমস্যাগুলো কখনো মদ, সিগারেট অথবা মাদক সমাধান করে দিতে পারবে না। সাময়িক ভাবে আপনার মধ্যে হয়ত ভালো লাগার একটা অনুভূতি তৈরি হলেও এগুলোর ক্ষতিকারক দিক অনেক বেশি।
  • চিকিৎসকের সাহায্য নিন
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোবিজ্ঞানী এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত থেরাপিস্ট, একটি সঠিক রোগ নির্ণয় প্রদান করতে পারেন এবং ওষুধ, সাইকোথেরাপি এবং সহায়তা গোষ্ঠীসহ উপযুক্ত চিকিৎসা বিকল্পগুলো সুপারিশ করতে পারেন।
  • ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করুন
তিনিই আমাদের সৃষ্টিকর্তা যাকে আমরা নির্দিধায় নিজের মনের সকল কথা বলতে পারি। ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের দিক থেকে আমরা প্রার্থনার মাধ্যমে নিজেদের সমস্যার কথা সৃষ্টিকর্তাকে জানানোর মাধ্যমে নিজের ভেতর প্রশান্তি নিয়ে আসতে পারি। যে সমস্যা গুলোর জন্য মানসিক রোগ অনুভব হচ্ছে, প্রার্থনার মাধ্যমে সেগুলো থেকে মুক্তির দোয়া করতে পারি।

আল কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
“আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও, যাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে, ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন’।” (সূরা আল-বাকারা : আয়াতে ১৫৫-১৫৬)

আমরা হতাশায় আক্রান্ত হলে তাঁর কাছেই ফিরে যাবো।আল্লাহ জিকির ও দোয়া করলে হতাশা দূর হওয়ার পাশাপাশি মনে অনাবিল প্রশান্তি অনুভূত হয়। আল কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

অর্থ:‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারা অন্তরে স্থিরতা ও শান্তি আসে।’ (সুরা রাদ: আয়াত ২৮)
রাসুল (সা.) বলেন, এমন একটি দোয়া সম্পর্কে আমি অবগত আছি, কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি তা পাঠ করলে, আল্লাহ তা'আলা তার সেই বিপদ দূর করে দেন। সেটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুস (আ.)-এর দোয়া। দোয়াটি হলো-
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বালিমিন।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি নিজের প্রতি অবিচার করেছি।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০৫)

নিয়মিত নামাজ পড়া, কুরআন তিলাওয়াত ও তাকদিরের উপর বিশ্বাস রাখা মুমিনকে অবশ্যই আল্লাহ সকল মানসিক শান্তি প্রদান করবেন। অতএব এটাই হচ্ছে মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় অথবা সন্দেহ রোগ থেকে মুক্তির উপায়।

আমরা যে ধর্মেরই হই না কেন স্রষ্টার প্রতি প্রার্থনা আমাদের মনকে শীতল করে, মনে এক অনাবিল প্রশান্তি তৈরি করে। তার কাছে একমাত্র আমরা আমাদের সব কিছু মন খুলে বলতে পারি। এতে আমাদের মন অনেকটাই হালকা মনে হয়।

পরিশেষ

শারীরিকভাবে সুস্থ কিন্তু মানসিকভাবে দুর্বল হওয়াকে মানসিক রোগ বলে এবং মানসিক রোগে আক্রান্ত রোগীকে মানসিক রোগী বলে। বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানে মানসিক রোগী দেখা যায় এবং আমরা এদেরকে পাগল বলে অভিহিত করে থাকে, তবে পাগলকে পাগল বলা উচিত নয়। উপরের উল্লিখিত উপায়গুলো আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপাকারী হবে। তবে পরামর্শ থাকবে দ্রুত ভালো ও অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url