মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্ক বিস্তারিত জেনে নিন
পোস্টসূচীঃমানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় অথবা হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায় জানা প্রত্যেকেরই প্রয়োজন। মানসিক চাপ জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানসিক চাপ থাকবেই। আমাদের লক্ষ্য হবে মানসিক চাপ কমিয়ে বা চাপমুক্ত হয়ে জীবন চলার পথে অগ্রসর হওয়া। মানসিক চাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবস্থা এতোটাই ভয়াবহ হতে পারে যে,অনেকেই জীবননাশের চিন্তা করে থাকেন।
মানসিক চাপ, বর্তমান সময়ে গুরুত্ব না দেয়া সবচেয়ে ভয়াংকর রোগগুলোর একটি। অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ অবাক হওয়ার মতই বিষয়। অনেকের মুখেই বলতে শোনা যায় যে, অর্থ দিয়ে সকল সুখ কেনা যায়। কিন্তু মানসিক শান্তি কেনা যায় না। কথা সত্য এটা অর্জন করতে হয়। মানসিক চাপের কারণ বিশ্লেষণ করে মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় গুলো জানার চেষ্টা করবো।
আরম্ভ
মানুষের জীবনে হাসি, আনন্দ, কষ্ট, ভালো কিংবা খারাপ সময়-এই সবকিছুরই মোকাবিলা করতে হয়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা সামাজিক বিভিন্ন কারণে প্রায়ই আমরা মানসিক চাপের মধ্যে থাকি। এটা আমাদের জীবনের খুব স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। কিন্তু এই মানসিক চাপ যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় এবং অনেকদিন ধরে থাকে তখনই সেটা কিছুটা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মানসিক চাপের পেছনে ঠিক কী কী কারণ জড়িয়ে আছে তা আমাদের নিজেদেরই খুঁজে বের করে সমাধান করতে হবে। মানসিক চাপ তৈরি করে নানা ধরনের ব্যক্তিগত ও সামাজিক সমস্যা। মানসিক চাপের লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয় ঘুম না হওয়া, কাজে মন বসাতে না পারা, দুশ্চিন্তা, মানসিক অস্থিরতা প্রভৃতি। অতএব নিম্নোক্ত আলোচনা হবে মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায়।
মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় বিষয়ক গবেষণামূলক তথ্য
বাংলাদেশ মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা থেকে জানা যায় বাংলাদেশে প্রায় ৫০% মানুষ মানসিক চাপে ভুগছে। এদের মধ্যে প্রায় ৩০% মানুষ বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, বা অন্যান্য মানসিক চাপজনিত রোগে আক্রান্ত।এই তালিকায় কিশোর কিশোরীরাও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
বিএমজি সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে জানা যায়, বাংলাদেশের স্কুলগামী কিশোর-কিশোরীদের ৭৩.৫ শতাংশের মাঝেই মানসিক চাপ সংক্রান্ত লক্ষণ দেখা গেছে। আর মানসিক চাপের উপসর্গ ৬৫% শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিলেছে।
দেশে মানসিক চাপের ফলাফল কিরূপ তা বুঝতে বাংলাদেশের আরো এক গবেষণার দিকে লক্ষ্য করুন।সেখানে ২ হাজার মানুষের সাক্ষাৎকার নেয়ার পর জানা যায় এদের প্রতি ১০০ জনে ৫ জন আত্মহত্যার চিন্তা করে। এরপর এই ৫ জনের মধ্যে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করে।
মানসিক চাপ কী?
মানসিক চাপ হলো এক ধরণের মানসিক পরিস্থিতি, যেখানে ব্যক্তির চাহিদা ও ক্ষমতার মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। সাধারণ অর্থে বলা যায়, আমরা যখন কোনো কাজ করতে যাই তখন সে পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে যখন করতে না পারি তখন মানসিকভাবে যে চাপ অনুভব করি।
মানসিক চাপের কারণে একজন ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে করে সে বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হয়। মানসিক চাপ একেক জনের জন্য একেক রকম হতে পারে।যেমনঃ
একজন ব্যক্তি তার চাকরি হারানোর কারণে মানসিক চাপের শিকার হতে পারে। এক্ষেত্রে তার মধ্যে অনিদ্রা, উদ্বেগ এবং হতাশার মত অনুভূতির ছাপ লক্ষনীয় হবে। সূতরাং মানসিক চাপ কী? এটা বুঝতে আর বাকি থাকার কথা নয়।
এক্ষেত্রে দেখা যায় একেকজনের পরিস্থিতি অনুযায়ী মানসিক চাপের লক্ষণগুলোতে ভিন্নতা দেখা দিতে পারে। তবে সবার প্রথমেই যেটা বুঝতে হবে তা হলো মানসিক চাপের কারণ। এবার সেটাই জেনে নেয়া যাক।
মানসিক চাপের কারণ
সকলের জন্য সবগুলো কারণ একত্রে পরিলক্ষিত হবে বিষয়টা সবসময় এরকম না। এক্ষেত্রে কারো কম-বেশি হতে পারে। সাধারণত, সকল মানসিক চাপ মূলত দুইটি কারণে হয়ে থাকে। ১) অভ্যন্তরীণ কারণ, ২) বাহ্যিক কারণ। এই কারণ গুলোর বিস্তারিত জেনে নিন।
- অভ্যন্তরীণ কারণ
- দুশ্চিন্তা থেকে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়ে থাকে
- হীনমন্যতা বা নিজেকে ছোট করে দেখার জন্য হতাশা সৃষ্টি হয় যা মানসিক চাপের কারণ
- বিষণ্ণতা মনকে খারাপ করে ফেলে যা মানসিক চাপ বাড়ায়
- অনান্য শারীরিক কারণ, যেমন – মাথাব্যাথা, ঘুমের সমস্যা, ক্ষুধা হ্রাস, ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি ইত্যাদি।
- বাহ্যিক কারণ
- পারিবারিক সম্পর্কের মন্দ অবস্থা ও কলহ
- কর্মক্ষেত্র বা অতিরিক্ত কাজের চাপ
- বেকারত্বের দুশ্চিন্তা
- অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা
- সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন, সম্পর্কের অবনতি জনিত চাপ ইত্যাদি।
মানসিক চাপের লক্ষণ
মানসিক চাপ কমানোর উপায় সম্পর্কে জানার আগে এর লক্ষণগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে। এজন্য আমরা ৩টি মাধ্যম লক্ষ্য করতে পারি। এগুলো হলো: শারীরিক লক্ষণ, মানসিক লক্ষণ, আচরণগত লক্ষণ।
- শারীরিক লক্ষণ
- মাথাব্যাথা
- মাথা ঘোরা
- ঘুমের অসুবিধা
- বমি বমি ভাব
- বদহজম হওয়া
- ওজন বেড়ে যাওয়া অথবা কমে যাওয়া
- নিজের মধ্যে অস্বস্তিবোধ করা
- অসুস্থতায় ভোগা
- মানসিক লক্ষণ
মানসিক চাপ যখন তীব্র হয় তখন সাধারণত নিম্নেলিখিত বিষয় গুলো ঘটতে পারে।
- উদ্বেগ
- ভয়
- বিরক্তি ভাব
- অল্পতেই রাগ
- হতাশা
- নিঃসঙ্গতা অনুভব
- অসহায় বোধ করা
- অনিশ্চয়তায় ভোগা
- সিদ্ধান্ত নেওয়ার অসুবিধা হওয়া
- আচরণগত লক্ষণ
- ধূমপান করা
- অ্যালকোহল বা ড্রাগ ব্যবহার
- অতিরিক্ত খাওয়া কিংবা খাওয়া কমিয়ে দেয়া
- রাতে ঘুম না হওয়া
- সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা সমাজ থেকে নিজেকে আড়াল করা
- তাছাড়া ব্যক্তির স্বভাব অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রেই এই লক্ষণগুলোর বাইরেও কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় কিংবা লক্ষণগুলো অল্প কিংবা বেশি পরিলক্ষিত হতে পারে।
মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় - হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়
- ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করুন
তিনিই আমাদের সৃষ্টিকর্তা যাকে আমরা নির্দিধায় নিজের মনের সকল কথা বলতে পারি। ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের দিক থেকে আমরা প্রার্থনার মাধ্যমে নিজেদের সমস্যার কথা সৃষ্টিকর্তাকে জানানোর মাধ্যমে নিজের ভেতর প্রশান্তি নিয়ে আসতে পারি। যে সমস্যা গুলোর জন্য মানসিক চাপ অনুভব হচ্ছে, প্রার্থনার মাধ্যমে সেগুলো থেকে মুক্তির দোয়া করতে পারি।
আল কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
“আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও, যাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে, ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন’।” (সূরা আল-বাকারা : আয়াতে ১৫৫-১৫৬)
আমরা হতাশায় আক্রান্ত হলে তাঁর কাছেই ফিরে যাবো।আল্লাহ জিকির ও দোয়া করলে হতাশা দূর হওয়ার পাশাপাশি মনে অনাবিল প্রশান্তি অনুভূত হয়। আল কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারা অন্তরে স্থিরতা ও শান্তি আসে।’ (সুরা রাদ: আয়াত ২৮)
রাসুল (সা.) বলেন, এমন একটি দোয়া সম্পর্কে আমি অবগত আছি, কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি তা পাঠ করলে, আল্লাহ তা'আলা তার সেই বিপদ দূর করে দেন। সেটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুস (আ.)-এর দোয়া। দোয়াটি হলো-
লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বালিমিন।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি নিজের প্রতি অবিচার করেছি।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০৫)
নিয়মিত নামাজ পড়া, কুরআন তিলাওয়াত ও তাকদিরের উপর বিশ্বাস রাখা মুমিনকে অবশ্যই আল্লাহ সকল মানসিক শান্তি প্রদান করবেন। অতএব এটাই হচ্ছে মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় অথবা হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়
আমরা যে ধর্মেরই হই না কেন স্রষ্টার প্রতি প্রার্থনা আমাদের মনকে শীতল করে, মনে এক অনাবিল প্রশান্তি তৈরি করে। তার কাছে একমাত্র আমরা আমাদের সব কিছু মন খুলে বলতে পারি। এতে আমাদের মন অনেকটাই হালকা মনে হয়।
- পছন্দের কাজগুলো করুন
চাইলেই খারাপ চিন্তা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। আর ঠিক সে সময় আপনার পছন্দের কাজগুলো বেছে নিতে হবে । হতে পারে ছোট বেলায় আপনি গান শিখতেন, আর পরবর্তীতে বড় হওয়ার পর বিভিন্ন কাজের চাপে নিজেকে সেভাবে সময় দেওয়া বা পছন্দের কাজগুলো করা হয় না। তাই আবার নতুন করে গান শেখা বা গান গাওয়া, ঘর গুছানো ইত্যাদি পছন্দের কাজগুলো করতে পারেন।
কবিতা আবৃত্তি, বই পড়া, বাগান করা বা অন্য যেকোনো পছন্দের কাজে সময় দিন। এই সময়টুকুতে অন্য সবকিছু ভুলে যান। মনের আনন্দে পছন্দের কাজগুলো করুন।
- প্রিয় মানুষদের সাথে যোগাযোগ করুন
মানসিক চাপ কমানোর উপায় হিসেবে প্রিয় মানুষদের সাথে সময় কাটানো খুব কার্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেননা, বন্ধুত্ব ও পারিবারিক বন্ধন মানসিক চাপ কমায়। বিশ্বস্ত বন্ধু কিংবা আপন মানুষের সাথে সমস্যার কথা খুলে বললে ধিরে ধিরে মাথা থেকে চাপ কমে আসে, নিজেকে খুব হাল্কা অনুভুব করতে পারবেন।
আপনার প্রিয় মানুষদের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরুন, তাদের শরণাপন্ন হোন।প্রিয় মানুষদের সাথে দেখা করুন, সময় কাটান। দেখা করা সম্ভব না হলে ফোনে কথা বলুন। প্রয়োজনে তাদের সাথে আপনার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন।
- মেডিটেশন কিংবা ব্যায়াম করুন
মেডিটেশন মানুষের অপ্রয়োজনীয় চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে কোনো খোলা পরিবেশে অথবা ছাদে হালকা মেডিটেশন বা ব্যায়াম করুন। সারাদিন বেশ হালকা আর ফুরফুরে লাগবে। শরীর যদি ভালো থাকে, তাহলে মনও ভালো থাকবে। যে কোনো কাজ মন দিয়ে করতে পারবেন।
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা রক্ষার জন্য খুব প্রাচীন ও সর্বস্বীকৃত উপায় হলো যোগব্যায়াম। কয়েক ধরনের যোগব্যায়াম রয়েছে। এগুলোর ভূমিকা ভিন্ন হলে তারা একত্রে আপনাকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে।
যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক রাখতে প্রানায়াম, দুশ্চিন্তা দূর করতে ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে মেডিটেশন, শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে উত্তরাসন করতে পারেন। যোগব্যায়াম করার সবচেয়ে উত্তম সময় হলো সূর্যাস্তের সময়। এছাড়াও বিকালে বা সন্ধ্যায়ও এটি করা যেতে পারে।
- ডিজিটাল ডিভাইস থেকে বিরতি নিন
আধুনিক সময়ে ডিজিটাল ডিভাইসে হারিয়ে যাওয়া ডিপ্রেশনের অন্যতম কারণ। সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। যার ফলে নিজের কাজের প্রতি মননিবেশ নষ্ট হয় আর মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়।
লেখক ক্রিস্টিন কার্লসনের “ডোন্ট সোয়েট দ্য স্মল স্টাফ” বইয়ে এই বিষয়ে জানিয়েছেন, তার মতে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট জানার জন্য ক্রমাগত ফোন চেক করা মানসিক চাপ বাড়াতে পারে। তাই তিনি জানিয়েছেন, প্রয়োজনের বাইরে ডিজিটাল ডিভাইজ পরিত্যাগ করুন আর নিজেকে সময় দিন।
- ভ্রমণে বের হন
মানসিক চাপ কমানোর আরেকটি ভীষণ কার্যকরী উপায় হলো ভ্রমণ করা। অশান্ত মনকে শান্ত করার জন্য ঘোরাঘুরি করার কোনো বিকল্প নেই। সাগর পাড়ে হিমেল হাওয়া, চিকচিকে বালি, সবুজ কোনো জায়গা- এর সবই প্রশান্ত করবে আপনার মন। তাই সুযোগ বুঝে বেরিয়ে পড়ুন পছন্দের কোনো জায়গায়।
প্রকৃতির কাছাকাছি থাকলে আমাদের মনে সতেজ থাকে। যারা ভ্রমণ পিপাসু মানুষ আছেন তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা থেকে মুক্ত। তাই আপনিও যদি মানসিক চাপ কমাতে চান তাহলে সারাদিনের কর্মব্যস্ততা, সাংসারিক কাজের মাঝে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য সময় বের করুন। যতটা সম্ভব প্রকৃতির কাছকাছি ঘুরতে যান।
- চুইংগাম চিবান
আপনি কাজের মধ্যে নানানভাবে অন্যমনষ্ক হয়ে যাচ্ছেন? মাথায় বিভিন্ন দুশ্চিন্তা ভর করে? এই সমস্যা এড়ানোর একটা উপায় হলো চুইংগাম চিবানো। চুইংগাম চিবানোর সময় আমাদের মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে। ফলে কাজে অধিকতর মনোযোগ দেওয়া যায়।
বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বেশ কার্যকর। কারণ এর ফলে কোনো বিষয় সহজেই আমাদের ব্রেইনের শর্ট-টার্ম মেমোরিতে সংরক্ষিত হয়।
- গান শুনুন
মাথায় চাপ থাকলে কাজে মন বসানো কঠিন হয়। সেক্ষেত্রে কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন, গান শুনুন। গান শুনলে মন ভালো হয়, মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে গান।
- চা পান করুন
চা মানসিক চাপ কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই চাপ কমাতে চা পান করতে পারেন। তবে খুব বেশি চা পান করার অভ্যেস না করাই ভালো।
- বুকভরে নিঃশ্বাস নিন
দীর্ঘশ্বাস নিন, বুকভরে শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন। এটা চাপ কমাতে ও মন শান্ত করতে সাহায্য করে।
- ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করুন
খাওয়ায় অনিয়ম করলে চলবে না। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করুন, ফলমূল ও শাকসবজি বেশি করে খান। পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- ঘুরতে যান
মানসিক চাপ আপনার কাজের ক্ষতি করছে, তাই সেটা কমানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য কাজের ব্যস্ততা যতই থাকুক, ঘুরে আসুন কোনো জায়গা থেকে। সেটা হতে পারে শহর থেকে দূরে প্রকৃতির কাছে, আবার হতে পারে আপনার পছন্দের যেকোনো জায়গা।
- পোষা প্রাণীর সাথে সময় কাটান
প্রাণীদের সাথে সময় কাটানোর মধ্য দিয়ে হিউম্যান বডিতে কর্টিসোল নামক হরমোন নিৎসৃত হয়, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। পোষাপ্রাণীর মধ্যে কুকুর ও বিড়ালের সঙ্গে থাকলে মানুষের একাকিত্ব ও অবসাদ কমে বলে ধারণা করা হয়।
এক্ষেত্রে যদি আপনার নিজস্ব পোষাপ্রানী হয় তবে খুব ভালো তবে যদি না থাকে তবে আশেপাশের প্রাণীদের সাথে সময় কাটান, তাদের খাওয়ানোর মাধ্যমে মানসিক চাপ কমবে।
- ছবি আঁকুন
দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য ছবি আঁকার কোনো বিকল্প নেই। আপনি হয়তো ভাবছেন- আমি তো ছবি আঁকতে পারি না। তাহলে কীভাবে সম্ভব? দেখুন, ইন্টারনেটের এই যুগে পারি না কথাটি অর্থহীন। আর সত্যি কথা বলতে, মন ভালো রাখার জন্য ছবি আঁকতে খুব বেশি শিখতেও হয় না।
ছোটবেলায় যা আঁকতেন সেখান থেকেই শুরু করুন। কেমন হলো সেটা নিয়ে খুব বেশি ভাবার দরকার নেই। রং পেন্সিল দিয়ে আঁকাআঁকি করে সময় কাটালে দেখবেন মনে কোনো দুশ্চিন্তা কাজ করবে না। আসল বিষয় হচ্ছে, ইন্টারেস্টিং কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা।
- ডায়েরি লেখার অভ্যাস করুন
আমাদের হাতে হাতে যখন ফোন আর ডিজিটাল লেখার যন্ত্র, তখন কাগজে কলমে লেখার অভ্যাস অনেকটাই চলে যাচ্ছে। কিন্তু এই অভ্যাসটাই যে আপনাকে কতটা প্রশান্তি দেবে, আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। কোনো কারণে খুব বেশি মন খারাপ লাগলে, কোনো বিষয় আপনাকে কষ্ট দিলে, প্রতিদিনের ছোট বড়, আনন্দ কষ্টের ঘটনাগুলো তারিখ দিয়ে ডায়েরিতে লিখে রাখুন।
অনেকদিন পর আপনি যখন পুরনো ডায়েরি খুলে পড়বেন, সেটা অন্য রকম ভালো লাগার আবেশ তৈরি করবে, পুরনো অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দেবে। আর ডায়েরি লেখার কারণে মনের ভেতরের চাপ অনেকটাই কমে যায়।
- বই পড়ুন
ভালো বই আমাদের চিন্তার জগতকে প্রসারিত করতে পারে, নিয়ে যেতে পারে ভিন্ন এক জগতে। কেননা বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমাদের মনের সৃজনশীল চিন্তাধারার বিকাশ ঘটে, ভাবনার নতুন পথ উন্মোচিত হয়। আর আপনার সামনে যখন নতুন এক দুনিয়া খুলে যাবে, তখন দুশ্চিন্তা স্থায়ী হওয়ার খুব বেশি সুযোগ পাবে না।
- নতুন রেসিপি রান্না করা
বর্তমান যুগে ছেলে-মেয়ে উভয়েই খুব ভালো রান্না করে। কাজেই মন খারাপ থেকে দূরে থাকতে নতুন নতুন রেসিপিও হতে পারে দারুণ সহায়ক। নিজের হাতে রান্না করা খাবার খেয়ে মন ভালো করাও কিন্তু দারুণ একটি বিষয়।
- বাগানে সময় দেওয়া
গবেষণা মতে, বাগান করার কাজে ডিপ্রেশন ও মানসিক চাপের উপসর্গ কমে আসে। এমনকি যারা কোনো শারীরিক বা মানসিক আঘাত, স্ট্রোক, অস্ত্রোপচার ও অন্যান্য সমস্যা থেকে সেরে উঠেছেন তাদের জন্য বাগান করা খুব সুন্দর একটি কাজ। এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপকার তো হয়ই, একই সাথে সবুজ সুন্দর হয় আপনার চারপাশ।
বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায়
বয়ঃসন্ধিকালে অনেকেই দোটানা পরিস্থিতিতে ভুগে ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমাতে যেগুলো করা যেতে পারে:
- পরিবারের সাথে খোলামেলা আলোচনা করে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার চেষ্টা করা।
- এসময়ে তীব্র আবেগ কাজ করে তাই অভিভাবকদেরও সতর্ক থাকতে হবে।
- অসৎ সঙ্গে জড়িয়ে না পড়ার ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
- পড়াশোনার চাপ অতিরিক্ত হচ্ছে কি-না সে ব্যাপারে বাবা-মায়ের সতর্ক থাকতে হবে।
- শারীরিক পরিবর্তন ও আগ্রহের দিকে খেয়াল রেখে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
পরিশেষ
আশা করছি উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা পেয়েছেন। তাই কোনো ব্যক্তির মানসিক চাপকে অবজ্ঞা না করে সমস্যার সমাধানে কাজ করুন। উপরে উল্লেখিত মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় অনুসরণ করুন এবং যদি মানসিক চাপের মাত্রা বেড়ে যায় তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। কেননা,বেঁচে থাকার জন্য শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
মনে রাখবেন, খারাপ সময় সবার জীবনে থাকে। সেই খারাপ সময়কে সাথে নিয়ে আমাদের হাসতে হয়, আনন্দ করতে হয়, জীবনের অজানা পথটুকু চলতে হয়। তাই যে কোনো উপায়ে নিজেকে ভালো রাখতে হবে, নিজেকে ভালোবাসতে হবে।ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url