শ্বেতি রোগের হোমিও ঔষধ | ধবল রোগের হোমিও ঔষধ
পোষ্ট সুচিপত্রঃশ্বেতি রোগের হোমিও ঔষধ | ধবল রোগের হোমিও ঔষধ
শ্বেতি রোগের হোমিও ঔষধ অর্থাৎ ধবল রোগের হোমিও ঔষধ জানা দরকার। কারণ কথায় বলে"হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন শুকনো ডালে পাতা গজিয়ে দিতে পারে" সে ডালে যদি প্রাণ থেকে।শ্বেতী রোগ এক সময় ‘কুষ্ঠ’ নামে পরিচিত ছিল। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, কুষ্ঠ রোগের সাথে শ্বেতির কোনো সম্পর্ক নেই। এটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যযুক্ত এবং নিরাময়যোগ্য একটি রোগ।
শ্বেতি রোগে আক্রান্ত লোকজন মারাত্মক মানসিক-সামাজিক সমস্যায় ভোগে। এমনকি পারিবারিক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও দাম্পত্য জীবনে সমস্যা সৃষ্টির ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়শ্বেতী রোগ পশ্চিমা দেশগুলোতে সুনির্দিষ্ট জাতীয় নীতিমালা ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধার মাধ্যমে এই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।
আরম্ভ
আমাদের ত্বকের নিচে আছে মেলানিন নামের এক প্রকার হরমোন। যা আমাদের ত্বকের রং নির্ধারণ করে থাকে।মেলানিনের ক্রিয়াকলাপে বাধা সৃষ্টি হলে দেখা দেয় শ্বেতি। শ্বেতি বংশগতভাবেও হতে পারে। শ্বেতি রোগের প্রকৃত কারণ সম্বন্ধে নিশ্চিত কিছু বলা যায় না। তবে পারদ ও উপদংশ রোগ এবং স্নায়বিক কারণে হতে পারে বলে অনেকে মনে করে।
প্রতি ১০০ জন শ্বেত রোগীর মধ্যে ৩০ জনের ক্ষেত্রেই শ্বেত হয় বংশগত ধারায়, মাতৃকুল বা পিতৃকুলের কারো না কারো থেকে জিনের প্রভাবে। বাকি ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে সাদা দাগ ছড়াতে থাকে নিজস্ব কারণে। যার মূলে রয়েছে মেলানিনের কারসাজি। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ১০ কোটি মানুষ শ্বেত রোগে আক্রান্ত। অতএব জানা যাক শ্বেতি রোগের হোমিও ঔষধ সম্পর্কে।
শ্বেতি রোগের হোমিও ঔষধ | ধবল রোগের হোমিও ঔষধ
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ শ্বেতি রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। গোটা বিশ্বে দুই কোটি মানুষ শ্বেতির জন্য হোমিওপ্যাথিকে বন্ধু বানাচ্ছেন।অনেক ব্যয়বহুল চিকিৎসার পরও যে শ্বেতি থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া যাবে তার নিশ্চয়তা নেই।হোমিওপ্যাথিক ঔষধ গত ১০০ বছর ধরে শুধু শ্বেতির ক্ষেত্রেই নয়, বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে যথেষ্ট কার্যকর। অতএব, নিম্নে ধবল বা শ্বেতি রোগের হোমিও ঔষধ সম্পর্কে আলোচনা করছি।
- আর্সেনিক সালফ ফ্লেবম(Ars Sulph F):
শ্বেতি রোগের হোমিও ঔষধ এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ওষুধ হচ্ছে আর্সেনিক সালফ ফ্লেবম। শ্বেতী রোগ অল্প পরিসর হলে ইহা উপযোগী। মনে রাখতে হবেন এ ঔষধ শ্বেতী রোগের চিকিৎসায় দীর্ঘদিন করতে হয়। প্রতিদিন Q মাদার ১০ ফোটা দিনে তিনবার সেবন করবেন, ওয়েল বুচি বাহ্যিক প্রয়োগ করতে হবে।
- সিফিলিনাম(Syphilinum):
শ্বেতী রোগের চিকিৎসা কালে অন্য ঔষধ ব্যবহারের পূর্বে বা মাঝে সিফিলিনাম1m, 10m, cm বা আরো উচ্চশক্তি মাঝে মধ্যে এক মাত্রা সেবন করলে শীঘ্রই রোগ আরোগ্য হওয়ার সহায়তা করে।
- সোরালিয়া কুরি(Psoralia Cori):
শ্বেতি রোগের গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ হচ্ছে সোরালিয়া কুরি।এটি Q বাহ্যিক প্রয়োগ করবেন।। 3x বা ৬ শক্তির বা মাদার টিংচার প্রয়োগে রোগ আরেগ্যে বেশি সহায়ক।
- রেডিয়াম ব্রোমাইড(Radium Bromide):
শ্বেতি রোগে রেডিয়াম ব্রোমাইড একটি উত্তম ঔষধ।তেজস্ক্রিয়তার কারণে শ্বেতি রোগ হয়ে থাকলে তার জন্য ইহা উপযোগী।এই কঠিন রোগ শুধু একটি ঔষধের সাহায্যে আরোগ্য নাও হতে পারে।তাই একটি ঔষধে উপকার না হলে অন্য ঔষধের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শক্তি 200 দিনে দুই বার বা উচ্চ শক্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- কষ্টিকাম(Causticum):
যে সমস্ত রোগীর চোখের পাতায়, নাকের ডগায়, হাতের আঙুলে ও নখের ধারে শ্বেতি দেখা দেয়, এরা খুব ভীতু এবং সামান্য কারণে উদ্বিগ্ন হয়। এই সকল রোগীদের ভালো কাজ করে। উচ্চ শক্তি প্রয়োগ করতে হবে।
- এসিড নাইট্রিক(Acid Nitric):
যে সকল রোগীদের মিউকাস মেমব্রেন এবং চর্ম্মের সন্ধিস্থলে যেমন- ঠোঁটের কোণে, নাকের কোণে বা গুহ্যদ্বারে শ্বেতি দেখা যায় তাদের খুব ভালো কাজ করে। এসিড নাইট্রিক ও থুজা সকাল-বিকাল সেবন করবেন উপকার পাবেন।
- সিপিয়া(Sepia):
সিপিয়া ঔষধটি মহিলাদের জন্য বেশি ব্যবহার হয়। শ্বেতির জন্যেও ব্যবহার করা হয়। যে সকল মহিলারা মেনোপজ হওয়ার সময় শ্বেতি রোগে আক্রান্ত হয়,তাদের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। তবে শ্বেতি রোগের সাথে মহিলাদের জরায়ু কোন রোগ থাকলে এই ঔষধ খুব ভালো কাজ করে। উচ্চ শক্তি প্রয়োগ করতে হবে।
- থুজা(Thuja Occi):
শ্বেতি রোগীর বংশের কারো শ্বেতি রোগ থাকার ইতিহাস থাকলে, মাসে 1m, 10m, 50m বা cm এক বার এই ঔষধ অবশ্যই প্রয়োগ করবেন।
আরো পড়ুনঃ গনোরিয়ার হোমিও ঔষধ
শ্বেতি রোগের হোমিও ঔষধ বাহ্যিক প্রয়োগ
শ্বেতি রোগের হোমিও ঔষধ এর পাশাপাশি অয়েল বুচি, সোরালিয়া কুরি, আর্সেনিক সালফ ফ্লেবম বাহ্যিক প্রয়োগ করলে আরোগ্যে সহজ হয়। হোমিওপ্যাথিতে উপযুক্ত চিকিৎসা আছে।ডাঃ ডগলাস বলেন, বাহ্যিক ভাবে এসেটিক অ্যাসিড লাগালে আক্রান্ত স্থানটির চারিদিকের বর্ণ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে।
মেডিসিন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবন করা যায় এবং ওয়েল বুচি, বাবাচি বাহ্যিক প্রয়োগে হোমিওপ্যাথিতে সম্পূর্ণ আরগ্য হয়ে থাকে। চিকিৎসক ও রোগী দু’জনকে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়।
আরো পড়ুনঃ আঁচিল দূর করার হোমিও ঔষধ
শ্বেতি রোগের হোমিও ঔষধ জেনে রাখা জরুরী
যদি শরীরে ভিটামিনের অভাব থাকে তবে সেই অনুসারে পথ্য খেতে হবে। ঘি, দুধ, ছানা, মাখন প্রভৃতি স্নেহ জাতীয় খাদ্য হিতকর। ফলের রস ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাদ্য প্রয়োজন, ফলে স্নায়ুর পুষ্টিসাধন এবং রক্ত উৎপাদনের কাজ হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস, উগ্র মশলাযুক্ত খাদ্য বর্জন, ক্ষতিকর নেশা পরিহার করতে হবে।
শরীর কে রোগ মুক্ত করতে প্রতিদিন আহারে ৫০% খাবার ফল এবং স্যালাট খান অথাৎ কাঁচা পাকা ফল কাঁচা সব্জি খান এতে শরীরে পটাসিয়াম ও সোডিয়াম পরিমাণের সমতা বজায় রাখে। পটাসিয়াম ও সোডিয়াম ১ঃ১ থাকলে কোন রোগ আক্রান্তের হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
ধূমপান, এলকোহল সেবন, উগ্র মশলাযুক্ত খাবার বর্জনীয়। কেউ কেউ বলে থাকেন- সাদা জাতীয় খাবার খাবেন না। যেমন- দুধ, ডিম, ছানা ইত্যাদি, তা সম্পূর্ণ কুসংস্কার।
আরো পড়ুনঃ চোখ চুলকানির হোমিও ঔষধ
পরিশেষ
শ্বেতি রোগের হোমিও ঔষধ বা ধবল রোগের হোমিও ঔষধ নিতে হবে অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক থেকে। যেই চিকিৎসক সবসময় রোগ সম্বন্ধে গবেষণা করে এবং অর্গাননের নিয়ম মেনে চিকিৎসা দেয়। চিকিৎসক দ্বারা শ্বেতি রোগীর চিকিৎসা নিলে আল্লাহর রহমতে হোমিওতে আরোগ্য পাওয়া সম্ভব।শ্বেত বা ধবল রোগ খুবই অস্বস্তিকর একটি রোগ। এ রোগের কারণে সমাজে অনেক বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা একটি লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। রোগীর সার্বলাক্ষনিক বিবেচনায় সঠিক ঔষধ প্রয়োগ করতে পারলে সহজেই নিরাময় সম্ভব। যদিও রোগটি আরোগ্য করা কঠিন তবুও হোমিও মতে সঠিক সময়ে ও সঠিক নিয়মে চিকিৎসা করলে আরোগ্য হয়। যদি এ পদ্ধতিতে নিরাময় সম্ভব না হলে বুঝবেন আপনি হয় সঠিক ডাক্তারের নিকট যাননি আথবা সঠিক ঔষধ ও নিয়ম অনুযাযী চিকিৎসা পান নাই।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url