ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার উপায় এবং ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে কতদিন লাগে এর ভবিষ্যৎ এবং ক্যারিয়ার কেমন বিস্তারিত জানাবো। ডিজিটাল মার্কেটিং অনলাইন বিজনেসের ক্ষেত্রে এক বিশাল সাম্রাজ্য। এই রাজ্যে বিচরণের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দক্ষতা। আপনি যত দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন, তত দ্রুত ক্যারিয়ার গড়তে পারবে। আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটার হতে চান, তবে আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
পরিশ্রম, সৃজনশীলতা এবং বিশ্লেষণধর্মী দক্ষতা আপনাকে সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছে দেবে। সুতরাং ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার জন্য নিম্নক্তো বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে থাকুন।
আরম্ভ
পৃথিবীতে যারা ফিনান্সিয়াল ফ্রিডম হয়েছেন তাদের অধিকাংশই ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে হয়েছে। সুতরাং ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার উপায় এবং ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে কতদিন লাগে, ডিজিটাল মার্কেটিং করে কত টাকা ইনকাম হয়, এর ভবিষ্যৎ কেমন এরং ক্যারিয়ার হিসেবে এটি কেমন হবে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আমরা আলোচনা করব, চলুন শুরু করা যাক।
ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার উপায়
ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার উপায় জানার পূর্বেডিজিটাল মার্কেটিং কি? জেনে নিই।
ডিজিটাল কিঃ 'ডিজিটাল' শব্দটি ইংরেজি 'ডিজিট' শব্দ থেকে গঠিত। 'ডিজিট' শব্দের অর্থ সংখ্যা, সূতরাং 'ডিজিটাল' শব্দের আভিধানিক বাংলা অর্থ হচ্ছে অঙ্গুলিসংক্রান্ত অথবা সংখ্যাগত। অর্থাৎ ডিজিটাল হচ্ছে আঙ্গুলের সাহায্যে গণনা করা।
মার্কেটিং কিঃ মার্কেটিং শব্দটি ইংরেজি শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে বিপণন, ক্রয়বিক্রয় অথবা বাজারজাতকরণ। এছাড়া পণ্যের প্রচার প্রচারণাকেও মার্কেটিং বলা হয়।
ডিজিটাল মার্কেটিং কিঃ ডিজিটাল মাধ্যম ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস, মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ইত্যাদি মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করে পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়, বাজারজাতকরণ অথবা প্রচার-প্রচারনাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলা হয়।
ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করতে হলে প্রযুক্তিগত প্রাথমিক ধারণা অথবা কম্পিউটার ব্যবহারের দক্ষতা থাকতে হবে, লেখালেখি এবং ছবি সম্পাদনা করা শিখতে হবে। প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে অনলাইন কোর্স করতে পারেন। ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার সেমিনারে অংশ নিতে পারেন।
যে ডিজিটাল মাধ্যমকে ব্যবহার করে ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করবেন সেই ডিজিটাল মাধ্যম সম্পর্কে আপনাকে ভালো জ্ঞান রাখতে হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় কি হচ্ছে সে সম্পর্কে চোখ-কান খোলা রাখা। অতঃপর যে বিষয়ে এক্সপার্ট হতে চান, সেটা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা অর্জন করতে থাকুন।
সুতরাং কম্পিউটার ব্যবহারের দক্ষতা, ইন্টারনেট ব্যবহারের দক্ষতা, যেকোনো সমস্যার সমাধান করার দক্ষতা এবং ডিজিটাল মার্কেটিং প্লাটফর্ম ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। শুধুমাত্র তাত্ত্বিক জ্ঞান থাকলে হবে না; বাস্তবে প্রয়োগ করতে জানতে হবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এ ভালো করতে হলে প্রচুর অনুশীলন করতে হবে। অতএব,একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট হতে চাইলে নিয়মিত অনুশীলনের বিকল্প নাই।
আরো জানুনঃ আর্টিকেল লেখার নিয়ম
ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার উপায়, ডিজিটাল মার্কেটিং এ আয় কেমন,কত টাকা ইনকাম করা যায় সহ ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্তর্ভুক্ত অনলাইন মার্কেটিং এর কয়েকটি জনপ্রিয় মাধ্যমগুলো নিম্নে দেওয়া হলো-
- Search Engine Optimization(SEO)
- Search Engine Marketing(SEM)
- Social Media Marketing(SMM)
- E-mail Marketing
- Affiliate Marketing
- Content Marketing
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনঃ ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যতম জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হল সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এস ই ও । সহজ ভাষায় যদি বলা হয় কোন সার্চ ইঞ্জিনে বা কোন ওয়েবসাইটে কিছু খুঁজি থাকি তখন আমরা বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেয়ে থাকি। অর্থাৎ অর্গানিকভাবে ওয়েবসাইটকে সঠিকভাবে অপটিমাইজ করে গুগলে টপ পেজে রেঙ্ক করা।
যেসব ওয়েবসাইট সঠিক এস ই ও করা থাকে সেসব ওয়েবসাইটের তথ্য আমরা সার্চ পেজের প্রথম থেকে পেয়ে থাকি। সেখান থেকে আমরা আমাদের পছন্দ মত লিংকে ক্লিক করে কাঙ্খিত ওয়েবসাইটে ভিজিট করে দরকারি তথ্য খুঁজে পায়। অসংখ্য সার্চ ইঞ্জিনের মধ্যে কয়েকটির নাম এখানে উল্লেখ করছি-
- গুগল ডট কমঃ(google.com)
- ইয়াহু ডট কমঃ(yahoo.com)
- বিং ডট কমঃ(bing.com)
- আস্ক ডট কমঃ(ask.com)
- ডগপাইল ডট কমঃ(dogpile.com)
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংঃ সোশ্যাল মিডিয়া হল এমন কিছু ওয়েবসাইট যা ব্যবহারকারীদের সুযোগ করে দেয় তাদের বন্ধু বান্ধবদের মাঝে এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এ সম্পৃক্ত হতে। পৃথিবীর প্রায় ৬৫% মানুষ সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত রয়েছে । জনপ্রিয় কিছু সোশ্যাল মিডিয়া উল্লেখ করা হলো-
- Facebook.com
- Twitter.com
- YouTube.com
- Instagram.com
- LinkedIn.com
ই-মেইল মার্কেটিংঃ কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা প্রমোশনের উদ্দেশ্যে তথ্য ইমেলের মাধ্যমে পাঠিয়ে যে মার্কেটিং করা হয় তাকে ই-মেইল মার্কেটিং বলে। কাস্টমারে মানসিকতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বুঝে সে অনুযায়ী কনটেন্ট লেখা উচিত এবং কাস্টমার কি চায় আপনি তাদের কিভাবে সাহায্য করবেন এই বিষয়গুলো মাথায় রাখা প্রয়োজন। ইমেইল মার্কেটিং করার জন্য নিম্নোক্ত টুলসগুলো ব্যবহার করতে পারেন-
- Mailchimp
- Active Campaign
- Omnisend
- Drip
- Send Pulse
- GetResponse
- Convertkit
- MailerLIte
এসব সফটওয়্যার ব্যবহার করে সহজে একসাথে অনেক মানুষকে ইমেল পাঠানো যায়। এবং টুলসগুলোর সাহায্যে খুব সহজে ইমেইল মার্কেটিং করা হয়।
এফিলিয়েট মার্কেটিংঃ অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে কোন কোম্পানির পণ্য বিক্রি করার মাধ্যমে কমিশন গ্রহণ করার প্রক্রিয়াকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে। যেসব মাধ্যম গুলো ব্যবহার করে এফিলেট মার্কেটিং করা হয় সেগুলো হচ্ছে-
- blog
- website
- YouTube channel
- social media page
কনটেন্ট মার্কেটিংঃ কনটেন্ট মার্কেটিং হচ্ছে মার্কেটিং এর একটি চমৎকার কৌশল। কনটেন্টের মধ্যে মূল্যবান, বস্তুনিষ্ঠ ও ধারাবাহিক উন্নতমানের তথ্য সংযুক্ত করে অডিয়েন্সকে আকৃষ্ট করা উদ্দেশ্যে যে মার্কেটিং করা হয় তাকেই কনটেন্ট মার্কেটিং বলা হয়। যেসব মাধ্যমগুলোর সাহায্যে কনটেন্ট মার্কেটিং করা হয় সেগুলো হচ্ছে-
- speech
- writing
- video
- graphics
ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে কতদিন লাগে
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে একজন বিগিনারের জন্য সাধারণত তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগে। ডিজিটাল মার্কেটিং এ দক্ষ হওয়ার জন্য ছয় থেকে দুই বছর সময় লাগতে পারে। তবে ডিজিটাল মার্কেটার কখনোই নতুন নতুন বিষয় শেখা বন্ধ করতে পারবেন না; এটা আজীবন নিত্য নতুন বিষয় শিখতে হবে।
আমরা ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে এ কথা বলতে পারি যে, ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার শুরু আছে কিন্তু শেষ নাই। ডিজিটাল মার্কেটিং এর শতাধিক টেকনিক আছে এবং ডজনেরও উপর মাধ্যমে আছে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর সকল মাধ্যমগুলো শেখা প্রায় অসম্ভব,তবে হতাশ হবেন না।
যে কোন একটি বিষয়ে আপনি এক্সপার্ট হন, তবে আপনি অবশ্যই সফল হবেন। আপনার মানসিকতা এবং ধারাবাহিক শিক্ষার মাধ্যমে আপনি কতটুকু সময়ের মধ্যে আয়ত্ত করতে পারবেন সেটাই নির্ভর করছে কতদিন সময় লাগবে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে।
আরো জানুনঃ ব্লগ তৈরির নিয়ম
ডিজিটাল মার্কেটিংএ আয় কেমন,কত টাকা ইনকাম করা যায়
ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে খুবই জনপ্রিয় একটি পেশা। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং এ আয় কেমন কিংবা কত টাকা আয় করা যায় এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তাহলে আপনার এক্সপেরিয়েন্স এর উপর নির্ভর করবে আপনি কত টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিংএক্সপার্ট হন তাহলে আপনি যথেষ্ট টাকা ইনকাম করতে পারবেন। কারণ এই মার্কেটপ্লেস গুলো হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস, এখান থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করা সম্ভব।
ডিজিটাল মার্কেটিং কেন করবো এর ভবিষ্যৎ এবং ক্যারিয়ার কেমন
ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, যেহেতু ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ইন্টারনেটের ব্যবহার যেহেতু সুইপার থেকে সুপার পর্যন্ত ব্যবহার করছে সেহেতু ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা, জানা, বোঝা এবং কাজ করা সবারই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং ক্রয় বিক্রয়ের জন্য এটি একটি জনপ্রিয় হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসার প্রচার দ্রুত এবং স্বল্প খরচে অনলাইনে গ্রাহক এর কাছে পৌঁছে দিতে পারছে। সুতরাং ইন্টারনেট ব্যবহারকারির সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে এর বিনিয়োগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মার্কেটারেরা প্রতি বছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি আয় করেন। ক্যারিয়ার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং কেমন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না, তবে এর জন্য প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি এবং দক্ষতা অর্জন।
পরিশেষ
পরিশেষে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে যে, ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অনেক। ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টর প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাংডিজিটাল মার্কেটিং শেখার উপায় জানুন এবং ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গড়ুন। আপনার উপকার পোছানো আমাদের একমাত্র কাম্য, ভালো থাকবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url