হার্টের রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
হার্টের রোগীর খাবার তালিকা প্রত্যেকের জানা দরকার, কারণ শরীরের প্রতিটি কোষে বিশুদ্ধ রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্তের মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেন প্রতিটি কোষে পৌঁছে যায়। আর বিশুদ্ধ রক্তকে কোষে কোষে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করে হার্ট। তাই হার্টকে দেহের পাম্প বলা হয়। সূতরাং হার্টের ব্লক দূর করার খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন।য
মনে রাখবেন, এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের দিকে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া যে কোন সমস্যা তৈরি হতে পারে। এমনকি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। তাই সচেতন থাকা ছাড়়া কোন উপায় নেই। চলুন জেনে নেয়া যাক হার্টের রোগীর খাবার তালিকা বা হার্টের ব্লক দূর করার খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত।
আরম্ভ
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, এখন অনেকে কম বয়সে হার্টের অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন। বয়স ৩০-এর গণ্ডি পেরলেই হার্ট অ্যাটাক অথবা হার্ট ফেলিওরের মতো কঠিন অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। আর এমন গুরুতর সমস্যার নেপথ্যে রয়েছে আমাদের খাদ্যাভ্যাস।
আমরা এমন কিছু খাবার প্রতিনিয়ত খেয়ে থাকি যা হৃৎপিণ্ডের চরম ক্ষতিসাধন করে। এই সকল খাবার এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাছাড়া বিপদের সম্মুখীন হতে সময় লাগবে না। সূতরাং হার্টের রোগীর খাবার তালিকা বা হার্টের ব্লক দূর করার খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রত্যেকের প্রয়োজন।
হার্টের রোগীর খাবার তালিকা | হার্টের ব্লক দূর করার খাবার
হার্টকে সুস্থ রাখতে চাইলে নিয়মিত শাক খান,হার্টের রোগীর খাবার তালিকা এর মধ্যে শাক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার। আর এই সমস্ত উপাদান কিন্তু হার্টের অসুখকে দূর করার কাজে নিয়োজিত । এছাড়াও শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন কে (K) মজুত থাকে। আর এই ভিটামিন কে (K) রক্তনালীর সুরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ আছে সেসব খাবার খাবেন। এসব খাবারের কারণে শরীরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়।কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে সাহায্য করে এই ব্যাকটেরিয়া।
- হার্ট সুস্থ রাখতে নিয়মিত সবজি খানঃ
বেশি আঁশ আছে এমন সবজির মধ্যে রয়েছে মটরশুঁটি কালাই ও ডাল জাতীয় শস্য।পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলছেন, আলু গজর এবং শেকড় জাতীয় সবজি খোসাসহ রান্না করলে সেগুলো থেকেও প্রচুর আঁশ পাওয়া যায়।ছাড়াও আটার রুটি এবং বাদামী চাল খাবারও পরামর্শ দিয়েছেন।
- হার্ট সুস্থ রাখতে নিয়মিত দানা শস্য খানঃ
হার্টের রোগীর খাবার তালিকা এর মধ্যে গোটা দানা শস্য রাখুন। এই ধরনের খাবার শস্যে তিনটি ভাগ অর্থাৎ- জার্ম, এন্ডোস্পার্ম এবং ব্রান উপস্থিত থাকে।এই সমস্ত উপাদান হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, এই জাতীয় খাবার নিয়মিত খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে কমবে। তাই আটা, বার্লি এবং ব্রাউন রাইসের মতো গোটা দানা শস্য নিয়মিত খাওয়া উচিত।
- হার্ট সুস্থ রাখাতে বেরি জাতীয় ফল খানঃ
স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি প্রভৃতি ফলে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই শরীরকে সুস্থ রাখার কাজে এই সব ফলের জুড়ি নেই। সবচেয়েগুরুত্বপূর্ণ কথা হল, এই ধরনের ফলে অ্যান্থোসায়ানিন নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পর্যাপ্ত পরিমাণে উপস্থিত থাকে যা কিনা হার্টের প্রদাহজনিত সমস্যাকে প্রশমিত করে। ফলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা থাকে না।
- হার্ট সুস্থ রাখতে মাছের তেল খানঃ
মাছের তেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড মজুত রয়েছে। আর এই ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে গভীর সমুদ্রের মাছ, যেমন- টুনা, ম্যাকেরেল, সার্ডিন, স্যালমন খেলে উপকার সবচেয়ে বেশি। তবে এই সব মাছ না পেলে কম ওজনের দেশি মাছ খান এতেও উপকার পাবেন।
মাছকে হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের জন্য সর্বোত্তম খাবারগুলোর একটি মনে করা হয়। তৈলাক্ত মাছকে সবচেয়ে ভালো মনে করা হয় এ কারণে যে, এতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এই উপাদানটি ট্রাইগ্লিসারাইড এবং প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।ইহা চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধির উপায়ও বটে।
- হার্ট সুস্থ রাখাতে ওয়ালনাট খান ঃ
ওয়ালনাটে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, কপার ও ম্যাঙ্গানিজের মতো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খনিজ। আর এই সমস্ত উপাদান ব্লাড প্রেশার কমাতে সাহায্য করে। ফলে নিয়মিত ওয়ালনাট খেলে হার্টে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমবে। এছাড়া এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। তাই প্রতিদিন একমুঠো ওয়ালনাট খেতে থাকুন।
- হার্ট সুস্থ রাখাতে বাদাম ও বীজ খানঃ
হার্ট সুস্থ রাখার জন্য বাদাম ও বীজ অন্যতম উপকারী খাদ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।বাদামে প্রচুর পরিমাণে সবল প্রোটিন, ভিটামিন এ ও ঈ, মিনারেল যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, আরগানিক অ্যাসিডগুলি পাওয়া যায়। এগুলি হার্টের স্বাস্থ্য নির্ভরশীল রক্তপাত ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
বীজে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, আয়রন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও প্রোটিন পাওয়া যায়। এগুলি হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং রক্তপাত ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।বাদাম ও বীজে মোনোস্যাচারাইড, পলিফেনল, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি পাওয়া যায়। এগুলি হার্টের স্বাস্থ্য বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
বাদাম ও বীজে প্রচুর পরিমাণে অমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। এটি হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে বাদাম ও বীজ খান। প্রতিদিন ৪-৫টি বাদাম এবং ১-২টি বীজ খাওয়া উচিত।
- হার্ট সুস্থ রাখাতে কমলালেবু খানঃ
কমলালেবু এখন প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। এই ফলটির মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অনেক শারীরিক সমস্যা, পাশাপাশি হার্টের সমস্যা সমাধান দিতে পারে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ।
- হার্ট সুস্থ রাখাতে ন্যাশপাতি খানঃ
ন্যাশপাতির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।এই ফলে রয়েছে ভিটামিন ডি, সি, কে এবংপটাসিয়াম ।পটাসিয়াম আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই হৃদরোগ দূরে রাখতে হলে নিয়মিত ন্যাশপাতি খেতে ভুলবেন না।
- হার্ট সুস্থ রাখতে নিয়মিত রসুন খানঃ
রসুনে শক্তিশালী ঔষধি গুণ রয়েছে যা হার্টের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে। এটি অ্যালিসিন নামক একটি যৌগের উপস্থিতির জন্য অনেক থেরাপিউটিক প্রভাব রয়েছে।রসুনের সম্পূরকগুলো সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক উভয় রক্তচাপ কমিয়েছে এবং রক্তচাপ কমাতে একটি সাধারণ প্রেসক্রিপশন ড্রাগের মতো কার্যকর। সূতরাং হার্টের রোগীর খাবার তালিকা এর মধ্যে রসুন থাকা চাই।
- হার্ট সুস্থ রাখতে নিয়মিত টমেটো খানঃ
টমেটোতে লাইকোপেনে ভরপুর। এ ছাড়া এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যসহ একটি প্রাকৃতিক উদ্ভিদ রঙ্গক। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিক্যালগুলোকে নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে, অক্সিডেটিভ ক্ষত এবং প্রদাহ প্রতিরোধ করে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।
গবেষণার একটি পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে, কাঁচা টমেটো, টমেটো সস, বা মিহি জলপাই তেলের সাথে টমেটো সস পরিবেশন করা রক্তের কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে পারে। শরীর তাজা টমেটোর তুলনায় রান্না করা টমেটো থেকে লাইকোপিন ভালভাবে শোষণ করে।
- হার্ট সুস্থ রাখাতে অন্যান্য খাবার খানঃ
লাল চাল, লাল আটার খাবার,অলিভ অয়েলের মতো তেল, ডিম (সপ্তাহে ছয়টি পর্যন্ত খাওয়া যাবে), কম ফ্যাটযুক্ত মাংস,চামড়া ছাড়া মুরগি।এসব খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, সোডিয়াম ও বাড়তি চিনি কম থাকে। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বার হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়ার ঝুঁকি কমানো যায়।
হার্টের রোগীরা কি কলা খেতে পারবে?
কলাতে পটাশিয়াম আছে যা হার্টের জন্য উপকারী। পটাশিয়াম আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এছাড়া কলার মধ্যে যে ফাইবার থাকে তা শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল বের করে দিতে সাহায্য করেন তাই হার্টের খেয়াল রাখতে কলা নিয়মিত খান ।
হার্টের রোগী কি দুধ খেতে পারবে?
দুধকে বলা হয় আদর্শ খাদ্য। দুধের মধ্যে সব ধরনের খাদ্য উপাদান বিদ্যমান যেমন-আমিষ, শর্করা, চর্বি এবং খনিজলবণসহ সব ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস। যেমন—ভিটামিন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ ইত্যাদি।
কিভাবে হার্ট শক্তিশালী করা যায়?
হার্টের জন্য দরকার একটু দ্রুত গতিতে হাঁটা। যা হার্টের রেট বাড়াতে সাহায্য করে। আবার হাঁটা ছাড়াও সাঁতার এবং সুইমিং এর মত ব্যায়াম হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি সবার জন্য উপযোগী নাও হতে পারে।এজন্য হাঁটাহাটির বিষয়টি সবাইকে বেশি জোর দিতে বলা হবে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় খেলাধুলা, হাঁটাচলা, গৃহস্থালির কাজ, ভ্রমণ, বিনোদনমূলক কাজ কিংবা শরীরচর্চার মতো কাজ।এইভাবে হার্ট শক্তিশালী করা যায়।
হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার সমূহ
- হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার রেডমিটঃ
হার্টের জন্য অত্যন্ত খারাপ হল রেডমিট। এক্ষেত্রে রেডমিট বলতে মূলত পাঠার মাংসের কথা বলা হয়। এই ধরনের মাংসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট। এই ফ্যাট ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই কারণে হার্টের রক্তনালীতে রক্ত চলাচলে ব্যঘাত ঘটে,ফলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে। তাই রেডমিট না খাওয়া উচিত।
- হার্টের জন্য ক্ষতিকর কোল্ড ড্রিংকসঃ
কোল্ড ড্রিংকস শরীরের জন্য খুবই খারাপ। এই পানীয়তে রয়েছে অ্যাডেড সুগার। এছাড়াও থাকে নানা ধরনের ক্ষতিকারক রাসায়নিক। সবমিলিয়ে কোল্ড ড্রিংকস ডায়াবিটিস এবং হাই ব্লাড প্রেশারের কারণ হতে পারে। আর এই দুই অসুখ সরাসরি হার্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে কোল্ড এড়িয়ে চলায়ই মঙ্গল জনক।
- হার্টের জন্য ক্ষতিকর পাস্তা ও পাউরুটিঃ
পাস্তা বা পাউরুটি তৈরি হয় ময়দা দিয়ে। আর ময়দা হল রিফাইন গ্রেইন। এতে শস্যের ফাইবারের ভাগ থাকে না। ফলে এই ধরনের রিফাইন গ্রেইন খেলে দ্রুত শরীরে মেদ জমে। এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পাস্তা বা পাউরুটি খাওয়া ব্যক্তিদের ডায়াবিটিস, হার্ট আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কয়েকগুণ বেশি। তাই এই ধরনের খাবার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।
- হার্টের জন্য ক্ষতিকর ফাস্ট ফুডঃ
অনেকেই নিয়মিত ফাস্ট ফুড খান। বাইরে বের হলেই চপ, সিঙাড়া, রোল বা পিৎজা দেখেন আর নিয়মিত এই ধরনের খাবার খেয়ে থাকেন।এই খাবারে প্রচুর পরিমাণে তেল ও নুন থাকে। এই দুই উপাদান কিন্তু হার্টের জন্য খুবই খারাপ। তাই নিয়মিত ফাস্ট ফুড খেলে হৃৎপিণ্ডের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- হার্টের জন্য ক্ষতিকর মদ্যপানঃ
মদ্যপানের মতো ঘাতক নেশার কারণে শারীরিক সমস্যার আশঙ্কা রয়েছে। এই নেশার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা।মদ পানে দেহে খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও বাড়ে। এছাড়া মদ্যপান ক্যানসারেরও কারণ। তাই মদ্যপান থেকে যত দ্রুত সম্ভব নিজেকে মুক্ত করুন।
মানুষের স্বাভাবিক হার্ট রেট কত?
মানুষের স্বাভাবিক হার্ট রেট প্রতি মিনিটে প্রায় ৬০থেকে১০০হতে পারে। এটি শারীরিক অবস্থা, জীবনযাপন, বয়স, লিঙ্গ, ও পরিবেশের কারণে পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, যেমন জীবনের সময় সম্পাদনে, ফিজিক্যাল কাজের সময় বা তন্দ্রাবিষয়ক অবস্থায়, হার্ট রেট বেড়ে যেতে পারে বা কমে যেতে পারে। যদি হার্ট রেট এক্সপেক্টেড রেঞ্জের বাইরে থাকে বা অতিরিক্ত সময় ধরে থাকে, তবে পরীক্ষা ও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি বলছে মোটামুটি মাত্রার শারীরিক পরিশ্রমের জন্য একজন মানুষের হার্ট রেট থাকা উচিত তার সর্বোচ্চ হার্ট রেটের ৬৪ থেকে ৭৬ শতাংশের মধ্যে।এখানে দেখা যাচ্ছে মোটামুটি মাত্রার শারীরিক পরিশ্রমের জন্য একজন ৫০ বছর বয়সী মানুষের হার্ট রেট ওই পরিশ্রম করার সময় ১০৯ থেকে ১২৯ এর মধ্যে থাকতে হবে। উচ্চমাত্রার শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে হার্ট রেট হবে সর্বোচ্চ হার্টরেটের ৭৭% থেকে ৯৩%।
হার্টের সমস্যা সমাধানের উপায়
- মানসিক চাপ কমানোঃ
ইতিবাচক মনোভাব এবংমানসিক চাপ কমানো হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।কর্মক্ষেত্র, সমাজ কিংবা পরিবার থেকে মানুষ নানাভাবে চাপে থাকে। এসব চাপ যেমন মোকাবিলা করতে হবে, তেমনি বুদ্ধি করে কমাতেও হবে। প্রতিদিনের কাজের চাপ শেষে নিজের জন্য আলাদা করে একটু সময় বের করুন।
পছন্দের গান শুনতে পারেন কিংবা বই পড়তে পারেন। কোনো কারণে মনে কষ্ট পেলে তা বন্ধু কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগ করে নিন। মনে কষ্ট পুষে রাখবেন না। এ ধরনের অভ্যাস হৃদরোগ ডেকে আনে। সবচেয়ে ভালো হয় পরিবার কিংবা কর্মক্ষেত্রে চমৎকার সামাজিক বন্ধন গড়ে তোলা।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৮০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণ একাকিত্ব বোধ করেন এখনকার মানুষ। অর্থাৎ ১৯৮০ সালে এ হার ছিল ২০ শতাংশ, এখন ৪০ শতাংশ। একাকিত্ব শুধু মানসিক ক্ষতি করে না, শারীরিক ক্ষতিও করে।
চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, কেউ যখন কারও সঙ্গে কথা বলে, তখন হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে মস্তিষ্ক হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। এতে হৃৎপিণ্ডের কার্যক্রম দারুণ সচল হয়ে ওঠে। অর্থাৎ হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে মানসিক চাপ কমানো এবং চারপাশের মানুষের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক গড়ে তোলাও জরুরি।
- খেলার ছলে ব্যায়ামঃ
হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে সপ্তাহে ন্যূনতম পাঁচ দিন করে রোজ ৩০ মিনিট ব্যায়ামের প্রয়োজন। কিন্তু ব্যায়ামের অভ্যাস না থাকলে শারীরিক কসরতের মাধ্যমে ঘাম ঝরানো ভীষণ ক্লান্তিকর ব্যাপার। এ কারণে বাসায় বাচ্চাকাচ্চা থাকলে তাঁদের সঙ্গে খেলার মধ্য দিয়ে ব্যায়ামের কাজটা সেরে নিতে পারেন। সেটা হতে পারে কায়িক পরিশ্রমের যেকোনো খেলা।
প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম মানে যে টানা আধঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে, সেটা কিন্তু নয়। এ সময়টাকে ভেঙে নিতে পারেন। সকালে ১০ মিনিট ঘাম ঝরালেন, দুপুরে অফিসে মধ্যাহ্নবিরতির সময় ১০ মিনিট হেঁটে খেতে গেলেন, অফিস থেকে ফেরার পর বিকেলে কিংবা রাতে এ রকম আরও কিছু কাজ দিয়ে ব্যায়াম সেরে নিতে পারেন।
- ধূমপান ত্যাগঃ
ধূমপানের অপকারিতা সমন্ধে আমরা সবাই জানি। এ বদভ্যাসটি ছাড়ার নির্দিষ্ট কোনো পথ নেই।তবে যে যার মতো করে চেষ্টা করতে থাকুন। চিকিৎসকের পরামর্শ, পরিবারের সাহায্য কিংবা ধূমপানের অপকারী দিকগুলো নিয়ে ভাবুন।এটা ছাড়ার উপকারী দিকগুলোতে মনোযোগী হতে পারেন। ধূমপায়ী বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ করাই শ্রেয়। শরীরচর্চার মধ্যে থাকলে ধূমপানের ইচ্ছা কমে যেতে পারে। কর্মচাঞ্চল্যের মধ্যে থাকলেও সুফল পেতে পারেন।
- ওজন কমানোঃ
পুষ্টিকর খাবার খান এবং ক্যালরি খরচ ও গ্রহণে ভারসাম্য আনুন। তরল খাবার খেতে পারেন। শাকসবজি থাকুক প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়। এ ছাড়া শারীরিক পরিশ্রম করুন। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা বাধ্যতামূলক করুন। লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। বাসা থেকে বের হয়েই রিকশা না নিয়ে হেঁটে কিছুটা পথ চলুন। বাসায় ফেরার পথেও একই কৌশল অনুসরণ করুন।
- খাদ্যাভ্যাস পাল্টানোঃ
আপনি প্রাণীজ উৎস থেকে প্রাপ্ত ‘স্যাচুরেটেড ফ্যাট’ (ক্ষতিসাধক স্নেহ পদার্থ) খেতে ভালোবাসেন। যেমন-রেডমিট কিংবা পূর্ণমাত্রায় ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি। হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে এসব খাবার ছাড়তে হবে। অভ্যাসটা ধীরে ধীরে পাল্টান। ‘রেডমিড’-এর মেন্যুতে ধীরে ধীরে ‘লোফ্যাটমিট’ যোগ করুন। দুগ্ধজাত খাবারের পরিবর্তে জলপাই কিংবা ‘ক্যানোলা অয়েল’ খেতে পারেন।
খাবারে লবণের পরিমাণ কমান। প্রক্রিয়াজাত কিংবা প্যাকেটজাত খাবার কম খান। প্রতিদিনের খাবারে বেশি লবণ খাবেন না।ভালো করে রান্না করলে শাকসবজি খান।প্রতিদিন সঙ্গে থাকুক ফলমূল, শস্যদানা যেমন- বাদামি চাল, বার্লি, পপকর্ন,গমের রুটি ইত্যাদি।
- বিশ্রাম নিনঃ
দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে পরিমিত বিশ্রাম নিন। কোনো চাপ নেওয়ার দরকার নেই। পূর্ণমাত্রায় বিশ্রাম হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী। যুক্তরাষ্ট্রের ‘একাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়াবেটিস’-এর চিকিৎসক সুসান মুরের ভাষ্য, হৃৎপিণ্ডের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় মানসিক চাপ ‘খলনায়ক’-এর ভূমিকা পালন করে।
মাঝেমধ্যে কাজ ফেলে উঠে দাঁড়ান। বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করুন। সাংসারিক কিংবা অফিসের কাজ ভুলে যান,স্রেফ নিজের জন্য বিশ্রাম নিন। সেটা শুয়ে-বসে যেকোনোভাবে। বিশ্রাম নেওয়ার পর দেখবেন ভীষণ ফুরফুরে লাগছে। এই বিশ্রামের সময়টুকু আপনাকে কাজের জন্য উজ্জীবিত করে তুলবে।
পরিশেষ
পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। কিন্তু গোটা শস্য সুরক্ষামূলক।একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি করে গোটা শস্য খাওয়া আপনার হার্টের স্বাস্থ্যের উপকার করতে পারে। গোটা শস্য খেলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, বিপাকীয় সিন্ড্রোম ইত্যাদি রোগ মোকাবিলা করা সহজ হয়।
মনে রাখবেন, হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত রাখতে বাদাম ও বীজ শুধুমাত্র একটি অংশ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। এদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও নিয়মিত চিকিৎসা প্রয়োজন।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url