এলার্জির জন্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ

এলার্জির জন্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ খুব কার্যকারী।হোমিওপ্যাথিতে অ্যালার্জির চিকিৎসা খুবই সফল৷ নিয়মিত ওষুধ খেলেই এলার্জি সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলা যায়৷শরীরে বাইরে থেকে কোনো এলার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান প্রবেশ করলে যদি তা শরীর গ্রহণ করতে না পারে তখন যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সেটিই হচ্ছে অ্যালার্জি।
চোখ জ্বালা, লাল হয়ে যাওয়া, চাকা চাকা ফুসকুড়ি, হাঁচি, সর্দি-কাশি এমনকি শ্বাসকষ্ট এবং শরীরে প্রদাহ তৈরি হতে থাকে। আর এই এলার্জি থেকে দূরে থাকা কঠিন। এলার্জির জন্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে রোগীর কষ্টের সমস্ত চিহ্ন এবং উপসর্গগুলি দূর করে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যের অবস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়।

আরম্ভ

এলার্জির জন্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি। সামগ্রিক উপসর্গের ভিত্তিতে ওষুধ নির্বাচনের মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করা হয়। বিবিসি নিউজের তথ্য মতে, দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ রোগী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করে আরোগ্য লাভ করেন। প্রত্যেক রোগীর উচিত একজন যোগ্যতা সম্পন্ন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা।

স্কিনে বা ত্বকে বা চামড়ায় এলার্জির লক্ষণ



  • স্কিনে বা ত্বকে বা চামড়ায় চুলকানি হওয়া
  • স্কিনে বা ত্বকে লালচে আকার ধারণ করে
  • ত্বকে বা চামড়ায় জ্বলা অনুভূ্তি হয়
  • স্কিনে বা ত্বকে ফুস্কুড়ি দেখা দেয়
  • স্কিনে বা ত্বকে বা চামড়ায় র‍্যাশ বের হয়
  • ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়

চোখে এলার্জির লক্ষণ




  • চোখে খোঁচা লাগা অনুভূতি হওয়া
  • চোখ চুলকাতে থাকে
  • চোখে এলার্জির কারণে লালচে হয়ে যায়
  • চোখ থেকে পানি পড়াতে থাকে
  • চোখে বাইরের কোন বস্তু আছে এমন অনুভূতি হয়

শ্বাস-প্রশ্বাসের স্থানে এলার্জির লক্ষণ





  • বুকে সাঁই সাঁই শব্দ করে
  • সর্দি কাশি প্রায় সময় দেখা দেয়
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের দ্রুত নিতে হয়
  • ফুসফুসে অতিরিক্ত রক্ত সঞ্চয় হয়
  • দম বন্ধ হওয়া অনুভূতি সৃষ্টি হয়

নাকেএলার্জির লক্ষণ

  • নাক দিয়ে পাতলা পানি পড়ে
  • নাক চুলকাতে থাকে
  • নাকে রক্তাধিক্যের দেখা দেয়
  • নাক প্রায় বন্ধ হয়ে থাকে
  • নাক ডগায় লালচে হয়ে যায়

জিআইটি এলার্জির লক্ষণ

  • বমি বমি ভাব অনুভূতি হয়
  • বমি হয়ে যায়
  • ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হয়
  • অসুস্থতা অনুভুতি হয়
  • পেট ব্যথা করে
  • পেট গ্যাস করে

অন্যান্য এলার্জির লক্ষণ

  • বুকে সাঁই সাঁই শব্দ হওয়া
  • নিঃশ্বাসের দুর্বলতা বা দ্রুততা দেখা দেয়
  • রক্তচাপ গুরুতর পতন বা কমে যাওয়া
  • খাদ্য গিলতে কষ্ট হয়
  • ঠোঁট, মুখ ও গলা ফুলে যায়
  • পেট ব্যথা করে
  • আমবাত দেখা দেয়
  • বমি বমি ভাব অনুভূতি হয়
  • বমি হয়ে যায়

এলার্জির জন্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ

  • আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম (Argentum Nitricum):
বেশি চিনি বা মিষ্টি খাওয়ার ফলে এলার্জি হলে আর্জেন্টাম নাইট কার্যকরী। আর্জেন্টাম নাইটের রোগীরা মিষ্টি বা চিনি পছন্দ করে, আবার সেই মিষ্টিই রোগীর রোগকে বৃদ্ধি করে।

চোখ থেকে হলুদ বা পুঁজের মতো তরল পানি, সাথে ফোলাভাব, চোখের সাদা, ভিতরের কোণে লাল, লালচে ভাব এবং জ্বালা, এরূপ লক্ষণে আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম কার্যকরী। রোগীর চোখ ক্লান্তময় এবং ব্যথাযুক্ত হতে পারে। আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম রোগীদের প্রায় লবণ এবং মিষ্টি পছন্দ করে।
  • আর্সেনিক এলবাম (Arsenic Album):
খোলসযুক্ত মাছ খেয়ে এলার্জি, অবিরত হাঁচি, চোখ জ্বলে এবং পানি পড়ে, অস্থিরতা, ঠান্ডায় বৃদ্ধি, গরমে উপশম, ঘনঘন অল্প অল্প পানি পান করে এমনকি ঠান্ডা পানীয়, ফল, পচা খাবার থেকে এলার্জিতে আর্সেনিক কার্যকরী ঔষধ। যাদের গরুর মাংসের প্রচন্ড এলার্জি, শরীরে ফুস্কুরির মত দেখা দেয়, প্রচুর চুলকায়, ঝিন ঝিন করে জ্বালা, গরম সেক দিলে উপশম হয় এরূপ লক্ষণে আর্সেনিক এলবাম।
  • কার্বো ভেজ (Carbo Veg):
খারাপ মদ, পচা-বাসী খাবার, লবণ, মাংস, মাখন,খারাপ ডিম, পোল্ট্রি আইটেম থেকে সৃষ্ট এলার্জিতে কার্বোভেজ কার্যকরী। এছাড়াও গরমে বৃদ্ধি ও শীত বা ঠান্ডা অপছন্দ, যে সকল খাদ্য রোগের সৃষ্টি হয় সেগুলোই খেতে চায় ইত্যাদি লক্ষণে কার্বো ভেজ কার্যকরী।
  • নাক্স ভোম(Nux Vom):
কফি থেকে সৃষ্ট এলার্জিতে নাক্স ভম দারুন কার্যকরী। উত্তেজক, অ্যালকোহল, তামাক, মিষ্টি খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং সেগুলি থেকে খারাপ বোধ করে এরূপ লক্ষণে নাক্স ভোম উপকারী।এন্টিবায়োটিক বা কোন ঔষধ খাওয়ার ফলে এলার্জি হলে নাক্স ভোম এবং সালফার কার্যকরী।এলার্জির জন্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নাক্স ভোম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • সালফার (Sulphur):
চুলকানিতে ব্যবহৃত অন্যতম উত্তম হোমিওপ্যাথিক ঔষধ হল সালফার।এন্টিবায়োটিক থেকে সৃষ্ট এলার্জিতে, ডাস্ট এলার্জিতে সালফার ভালো কাজ করে। সালফারের প্রধান প্রধান লক্ষণগুলো যেমন সকাল ১১টার দিকে ভীষণ খিদে পাওয়া,এলার্জি অবস্থায় চোখ লাল হয়ে যায়,মাথা গরম, মাথার তালু-পায়ের তালুসহ শরীরে জ্বালাপোড়া ইত্যাদি পাওয়া গেলে অবশ্যই সালফার প্রয়োগ করতে হবে।


অলস ব্যক্তি, পরিচ্ছন্নতার প্রতি আগ্রহী নয়, পোশাকের যত্ন নেয় না, গোসল করতে ভালো লাগে না, গোসল করলে রোগ বৃদ্ধি পায়। সব সময় চর্মরোগ থাকে, চুলকাতে প্রচুর ভালো লাগে, মনের সূখে চুলকাতে থাকে, চুলকালে উপশম হয় কিন্তু চুলকানোর পরে প্রচুর জ্বালা করে।
  • নেট্রাম মিউর (Natrum Mur):
অতিরিক্ত লবন প্রিয়দের এলার্জিতে নেট্রাম মিউর একটি কার্যকরি ঔষধ। নেট্রাম মিউরের এলার্জির ক্ষেত্রে অন্যতম লক্ষণ হল একের পর এক হাঁচি দিয়ে নাক, গলা, কান বেশি চুলকায়। নেট্রাম মিউরের রোগী অত্যন্ত আবেগপ্রবণ,খিটখিটে প্রকৃতির এবং যখন মন খারাপ থাকে তখন কারো উপস্থিতি বা কোন সান্ত্বনা দেওয়া পছন্দ করে না এমন লক্ষণে নেট্রাম মিউর উপকারী।
  • পালসেটিলা (Pulsatilla):
নরম মনের মানুষ, চর্বিযুক্ত খাদ্য, মিষ্টি, মাংস, পোলাও পিঠা খেয়ে সৃষ্ট এলার্জিতে পালসেটিলা অতি কার্যকরি ঔষধ। পালসেটিলা রোগীর এলার্জির লক্ষণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঘন ঘন হাঁচি, নাক লাল হয়ে যায়, চুলকানি।

চোখের এলার্জির ক্ষেত্রে চোখের পাতা ফোলা, চোখ দিয়ে একটা হলুদ পাতলা পানির মত বের হয়, চোখ জ্বালা করে এবং সাথে চুলকানি, মনে হয় চোখের পাতাগুলো দানা বেঁধে আছে ইত্যাদি লক্ষণে
পালসেটিলা উপকারী।
  • লাইকোপেডিয়াম (Lycopodium):
কোষ্ঠবদ্ধতা থাকলে লাইকোপেডিয়াম একটি চমৎকার ও কার্যকারী হোমিওপ্যাথিক ঔষধ। গ্যাস এবং খাদ্যে এলার্জির সমস্যায় লাইকোপেডিয়াম উপকারী। লাইকোপেডিয়ামের রোগীরা খিদে অনুভব করে। অল্পতেই পেট ভরে যায়, খাওয়ার পরে ক্লান্তি, সমস্যা সাধারণত বিকাল এবং সন্ধ্যায় সবচেয়ে বেশি খারাপ হয়।
  • ডলিকস (Dolicos):
গর্ভাবস্থায় এলার্জি হলে ডলিকস অতি কার্যকারী হোমিওপ্যাথিক ঔষধ।
  • এপিস মেল (Apis Mel):
তাপ বা গরম থেকে এলার্জি বা ঘামের পর এলার্জিতে এপিস মেল কার্যকরী।
  • আর্টিকা ইউরেন্স (Urtica Urens):
চিংড়ি খেয়ে সৃষ্ট এলার্জি, আক্রান্ত স্থানে হাত বোলালে উপশম, শুইলে মিলিয়ে যায়, বিছানা থেকে উঠলেই আবার বের হয়, চুলকালে ফুলে যায় এরূপ লক্ষণে আর্টিকা ইউরেন্স একটি চমৎকার ও কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক ঔষধ।
  • জাস্টিসিয়া অটোটেডা (Justicia Adhatoda):
ধুলো থেকে এলার্জি, সান্ধ্যকালীন সময়ে নাক দিয়ে প্রচুর পানি ঝরে সাথে হাঁচি এরূপ এলার্জিতে জাস্টিসিয়া কার্যকারী ঔষধ।
  • ডালকামারা (Dulcamara):
ঠান্ডা বা ”দিনে গরম রাতে ঠান্ডা ” এ রকম আবহাওয়া, আদ্রতাযুক্ত আবহাওয়ার কারণে এলার্জি হলে ডালকামারা অতি কার্যকরী।
  • সোরিনাম (Psorinum):
রোগী শীতকাতর, নোংরা প্রকৃতির, গম বা গম জাতীয় খাবার খেয়ে এলার্জি হলে সোরিনাম। শরীরে অসহ্য চুলকানি, বিছানার গরমে বৃদ্ধি, চুলকাতে চুলকাতে রক্ত বের হয়। ঠান্ডা বাতাসে, শীতের শুস্ক ঠান্ডায়, ঋতু পরিবর্তনে রোগ বৃদ্ধি, বিছানার উত্তাপ সহ্য হয় না । এক্ষেত্রে এলার্জির জন্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সোরিনাম কার্যকরী।
  • পেট্রোলিয়াম (Petroleum):
বাঁধাকপি থেকে এলার্জিতে, বিশেষ করে শীতকালে, পেট্রোলিয়াম কার্যকরী। রোগ বিছানার তাপে ও বাঁধাকপি খেলে বাড়ে, খোলা বাতাসে উপশম, তেল-তৈলাক্ত এবং গরম খাবার, মাংস ইত্যাদি পছন্দ।
  • থুজা (Thuja Occidentalis):
মিষ্টি, তেল-চর্বিযুক্ত খাবার, পেঁয়াজ থেকে সৃষ্ট এলার্জিতে থুজা কার্যকরী।
  • সিপিয়া (Sepia):
গরম দুধ থেকে এলার্জি, ঠান্ডা লেগে চাবুকের দাগের ন্যায় লম্বা এলার্জি এবং গরম তা মিলিয়ে যায় এতে সিপিয়া কার্যকরী।
  • হিস্টামিন (Histamine):
ময়লা, ধুলো-বালি বা ডাস্ট এলার্জি, তীব্র সুগন্ধি থেকে সৃষ্ট এলার্জিতে হিস্টামিন কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক ঔষধ।

এলার্জির জন্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ, সাথে খাবারগুলো অন্তর্ভুক্ত করুন

শাক সবজি হলুদ এবং কমলা সবজি
বাঁধাকপি, বীট, গাজর, মিষ্টি আলু
পেঁয়াজ, রসুন, আদা, গোলমরিচ

এলার্জির জন্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ গ্রহণ করুন, আর খাবারগুলো বর্জন করুন

অ্যালকোহল, কফি, এবং দুগ্ধজাত খাবার
কলা এবং সাইট্রাস ফল
রঙ মিশ্রিত খাদ্য
চকলেট, চিনাবাদাম
লাল মাংস,চিনি,গম

পরিশেষ

পরিশেষে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে,দীর্ঘমেয়াদি রোগে রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাস নিয়ে লক্ষণ অনুযায়ী সালফার, পালস, ন্যাট মিউর, সিপিয়া, থুজা ইত্যাদি ধাতুগত অ্যান্টিমায়াজমেটিক ওষুধের সাহায্য নিলে দীর্ঘস্থায়ী উপকার পাওয়া সম্ভব।তবে, উপরিউক্ত ওষুধ অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই সেবন করা উচিত নতুবা ফলাফল হিতের বিপরীত হওয়া অনিবার্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url