বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হয় কেন বিস্তারিত
বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হয় কেন বিস্তারিত এবং বসন্ত উৎসব কেন পালন করা হয় জানা দরকার।প্রকৃতিতে রূপের পসরা নিয়ে হাজির হয় এই ঋতুরাজ বসন্তকাল। ঋতু গুলোর মধ্যে ষষ্ঠতম ঋতু হলো বসন্তকাল। ফাল্গুন এবং চৈত্র মাস হচ্ছে বসন্তকালের অন্তর্ভুক্ত।
শীতের শেষে রূপ আর সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে আসে ঋতুরাজ। প্রকৃতির অপরূপ বৈচিত্র্যে অনন্য হয়ে বাংলা বর্ষের শেষে ফাল্গুন ও চৈত্রে ধরা দেয় বসন্ত। বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হয় কেন বিস্তারিত আপনার সামনে তুলে ধরছি।
পরিচয়প্রদান
বসন্ত ঋতু আগমনের আগেই শীত চলে যায় এবং গ্রীষ্ম আসার আগে বসন্তের আগমন ঘটে।এই ঋতুতে গাছে গাছে ফুলে ফুলে ভরে যায়।নতুন নতুন পাতা গজায়, ফলে প্রকৃতি নতুন সাজে সজ্জিত হয়। সূতরাং বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হয়,বসন্ত উৎসব কেন পালন করা হয়?এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়াস পাবো; পড়তে থাকুন।সুতরাং বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হয় কেন বিস্তারিত জানবো।
পহেলা ফাল্গুন বসন্ত উৎসব
‘ও মা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে’
প্রাচীনকাল থেকেই বসন্ত উৎসব পালন করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে পহেলা ফাল্গুন। এই দিনে গোটা বিশ্ব জুড়ে ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করা হবে। আর আমার পহেলা ফাল্গুন পালন করতে পারবো। সেই দিনটি হবে ফাল্গুন মাসের ১ তারিখ।
"লাল শাড়ি হলুদ শাড়ি সাদা শাড়ি পড়ে,
বেরিয়েছে কত রমণী পথে।
রঙ বেরঙের ফুলগুলো খোঁপায় গুঁজে,
সেজেছে তারা কারো অভিমতে।"
বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হয় কেন বিস্তারিত
শীতের রুক্ষতা শুষ্কতা অতিক্রম করে প্রকৃতি নতুন সাজে সজ্জিত হয়। গাছে গাছে নতুন পাতা গজায়, প্রতিটি গাছ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। প্রকৃতি যেন আমাদের কাছে রাজার বেশে উপস্থিত হয়। এই সুসজ্জিত প্রকৃতি হওয়ার কারণেই বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হয়।
"তবু আসে ফাল্গুন সে ঐ ঋতুর রাজা
ভাল সে বাসে সুন্দর বসুন্ধরা;
নিজের হাতে সাজিয়ে লুফে নেয় মজা
অবাক নয়নে দেখি সে অপ্সরা।"
বসন্ত উৎসব কেন পালন করা হয়
বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হয় কেন বিস্তারিত জানার পর এখন জানবো বসন্ত উৎসব কেন পালন করা হয়।
"এলো ঔ বনান্তে পাগল বসন্ত
বনে বনে মনে মনে রঙ সে সরাই রে
চঞ্চল তরুণ দিগন্ত।"
চীনের প্রাচীনতম ও গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল বসন্ত উৎসব।ইতিহাস থেকে জানা যায় প্রাচীন আমল থেকে বাঙালি বসন্ত উৎসব পালন করে আসছে।হিন্দু ধর্মের পৌরাণিক উপাখ্যানগুলোতে বসন্ত উৎসবের কথা উল্লেখ আছে। হিন্দু বৈষ্ণব ধর্মের লোকেরা এই উৎসব বেশ আয়োজনের সাথে পালন করে আসছে।
ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলের প্রাচীন আর্য জাতির হাত ধরে বসন্ত উৎসবে জন্ম হয়। খ্রীস্টের জন্মের বেশ অনেক বছর আগে বসন্ত উৎসব ছিল। আনুমানিক ৩০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকেই উৎসবের উল্লেখ আছে বলে নমুনা পাওয়া যায়। হিন্দু ধর্ম বেদ এবং পুরাণে উল্লেখ আছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির রহস্য
বসন্ত কাল নিয়ে কিছু কথা
অপেখারা জাপটে ধরে,সূচনা ফাল্গুনের;
ঝরার পরেও ফুল ফোটে পলাশের বনে।
অভিমান সব ভুলে মানুষ কাছে আসুক বেশ;
এই বসন্তে এবার হোক ঝগড়াগুলোর শেষ...
বসন্তে শুধু প্রকৃতিই রঙিন হয় না বরং আমাদের হৃদয়ও রঙিন হয়ে ওঠে। তাই আমরা প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যায় এবং এই কারণে বসন্তকে প্রেমের ঋতুও বলা হয়।
বাংলাদেশে বসন্ত উৎসবের ইতিহাস
বসন্ত উৎসব বাংলাদেশ পালন শুরু হয় ১৯৯৮ সানে (জনকণ্ঠ 20.12.1998)। এর আগে বসন্ত উৎসব নামে কোন উৎসবের উপস্থিতি দেশে ছিলেন। এটা হিন্দুদের মূর্তিপূজা ও প্রকৃতি পূজার সাথে অনেকটা মিলে যায় তাই এটা মুসলমানদের সঠিকভাবে উদযাপন করা ঠিক নয় বলে ধারণা করে। তবে এখন সকল ধর্মালম্বীরা এই বসন্তবরণ অনুষ্ঠান করে থাকে।
বসন্তকালের উৎসব
বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হয় কেন বিস্তারিত জানার পর এখন জানা যাক বসন্তকালের উৎসব ঋতু ভেদে সারাবিশ্বেই পালিত হয় বসন্ত উৎসব। পহেলা ফাল্গুনে এই বসন্ত উৎসব পালন করা হয়। এই দিনে লাল, হলুদ রঙের পোশাক পরে খোপায় ফুল গুজিয়ে নারী ও তরুনেরা উৎসবে মেতে ওঠে।
"ওহে গৃহবাসী খোল্ দ্বার খোল্ লাগল দে দোল"-এই গানের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর ভারতের শান্তিনিকেতনে উদযাপিত হয় বসন্ত। দেশ জুড়ে এটি হোলি নামে পরিচিত।
এশিয়ার প্রভাবশালী দেশ চীনে বসন্ত উৎসব ঘটা করেই উদযাপন করা হয়। চৈনিক নববর্ষের এই উৎসব শুধু চীনেরাই নয় উদযাপন করে অধিকাংশ মঙ্গলীয় নৃগোষ্ঠী।
এশিয়ার ইরান দেশটির বসন্তের আলাদা রীতি আছে। এটি প্রায় তিন হাজার বছর ধরে উদযাপিত হয়ে আসছে। ইরানে এর নাম নওরোজ ,যার মানে হচ্ছে নতুন দিন।
বসন্তকালের ছবি আঁকা
বসন্তকালের ছবির দৃশ্য
"কোকিল ডাকে গাছের ডালে
বাগান ভরলো অনেক ফুলে,
প্রিয় ঋতু বসন্ত
তাইতো আমার আনন্দ।"
বসন্ত কালের বৈশিষ্ট্য
ফাল্গুন আর চৈত্র মাস মিলে বসন্ত ঋতুর আয়োজন সম্পন্ন হয়। ফাল্গুন একেবারে গ্রামীণ শব্দ থেকে উৎসারিত। এ মাসে গাছে গাছে কচি কচি পাতাগুলো গজে ওঠ। গাছে গাছে কোকিলেরা ডেকে ডেকে হয়রান হয়ে যায়। আর কোকিল হয়ে ওঠে প্রেমময় মানুষের সহায়।
বসন্তকালের বর্ণনা
বসন্তকাল এটি বছরের শেষ ঋতু। দখিনা ঝিরিঝিরি বাতাস নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া নিয়ে আসে বসন্ত। শীতের নির্জীব প্রকৃতি যেন সহসা জেগে ওঠে। বসন্তকাল সত্যি ঋতুরাজ। তার জাদুময় স্পের্শ তৃণলতা নতুন পাতায় পাতায় সুশোভিত হয়ে উঠে।
প্রকৃতির নিলা নিকেতনের এই দেশে পরস্পর ছয়টি ঋতু আসে। পাহাড় নদ নদী এক মহান শিল্পীর আঁকানিখুত চিত্রকর্ম, শীতের কুয়াশার চাদর ছেড়ে আবির্ভাব হয় বসন্তের সবুজ কিশালয়।
বসন্তকালের ফুল ও ফল
পলাশ, পাখিফুল, পালম, মনিমালা, মহুয়া মুচকুন্দ, রুদ্রপলাশ, শাল, শিমু , স্বর্ণশিমূল, ক্যামেলিয়া ইত্যাদি প্রকৃতিকে নতুন সাজে সাজায়।
স্ট্রবেরিঃ স্ট্রবেরি ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল।
চেরিঃ চেরিতে ক্যালরি কম থাকে।
কমলাঃ কমলা কোষের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
ব্ল্যাকবেরিঃ ব্ল্যাকবেরির অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
বসন্তকাল সম্পর্কে বিশেষ কথা
ঋতুচক্রের ছয়টি ঋতুর মধ্যে শেষ ঋতুটি হল বসন্ত।ফাল্গুন ও চৈত্র এই দুই মাস নিয়ে হয় বসন্তকাল।প্রকৃতির রাজ্যে বুড়ো শীত চলে যাওয়ার পর ঋতুরাজ বসন্তের আবির্ভাব ঘটে। এই ঋতুটি হল সকল ঋতুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তাই একে ঋতুরাজ বলা হয়।
বসন্তকালের পরিষ্কার ঝকঝকে সকাল প্রকৃতিরাজ্যে এক মনোমুগ্ধকর প্ররিবেশের সৃষ্টি করে। গাছে গাছে নতুন নতুন পাতা গজায়। পলাশ, শিমুল ও কৃষ্ণচূড়া গাছের সবুজ শাখা লাল ফুলে ভরে উঠে। চারিদিকে কোকিলের কুহু কুহু ডাক শুনতে পাওয়া যায়। ঋতুরাজ বসন্ত যাবার আগে নতুন বছরের বৈশাখীর আনন্দ বাঙালীকে উপহার দিয়ে বিদায় গ্রহণ করে।
পরিশেষ
বসন্ত ঋতুর আগমন ঘটে শীত চলে যাওয়ার পর এবংগৃীষ্ম আসার আগে। বসন্তকাল কে যেহেতু ঋতুরাজ বলা হয়। সেহেতু শীতের রুক্ষ, বিবর্ণ দিন পেরিয়ে বসন্ত আসে বর্ণিল ফুলের তোড়া নিয়ে। বসন্ত বাঙালির মনে আনন্দের বন্যা বয়ে আনে।বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হয় কেন বিস্তারিত জানানো হয়েছে। পরিশেষে বলতে চায়, ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url