সারোগেসি কিভাবে করা হয়? সারোগেসি সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
সারোগেসি কিভাবে করা হয়? সারোগেসি সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
‘সারোগেসি’ একটি পরিচিত এবং আলোচিত শব্দ। সন্তান গ্রহণের এক নতুন প্রযুক্তির নাম এই সারোগেসি।আধুনিক বিশ্বে সন্তান জন্মদানের নতুন একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে। যাকে বলা হচ্ছে ‘সারোগেসি’। সারোগেসি কিভাবে করা হয় এবং সারোগেসি সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।
সারোগেসির সংক্ষিপ্ত পরিচয় হলো গর্ভভাড়া। অর্থাৎ সারোগেসি এমন এক ধরনের পদ্ধতি যেখানে সন্তান জন্মদানের জন্য গর্ভ ভাড়া করা হয়। এ পদ্ধতিতে একজন নারী তার নিজের গর্ভে বিশেষ প্রক্রিয়ায় অন্যের সন্তান ধারণ করে এবং জন্ম দেয়।চলুন বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
আরম্ভ
একজন নারীর গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারণের পদ্ধতিকেই সারোগেসি বলে। এ ক্ষেত্রে গর্ভ ধারণের কাজটি যে নারী করেন তাকে ‘সারোগেট মাদার’ বলা হয়।সারোগেসি কিভাবে করা হয়? এ পদ্ধতি সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?এর পদ্ধতি কত প্রকার হয়ে থাকে বিস্তারিত জানবো।
সারোগেসি কী
ইংরেজী সারোগেসি (Surrogacy) শব্দটির প্রকৃত অর্থ "প্রতিনিধিত্ব"। একজন নারী আরেকজন নারীর প্রতিনিধিত্ব করে, তার জন্য গর্ভধারন করে; এটাই হচ্ছে সারোগেসি।১৯৪০ - ১৯৫০ সালে এ পদ্ধতির সুচনা হয়। ১৯৮৬ সালে প্রথম সফলভাবে সারোগেসি পদ্ধতিতে শিশুর জন্ম হয়। গত ৩৮ বছরে অনেক উন্নতি হয়েছে, এখন অনেকেই এই সারোগেসি পদ্ধতি গ্রহন করছে।
মানব শিশু মাতৃগর্ভে যেমন থাকে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে বড় হয়ে পরিপূর্ণ শিশু হয়। প্রথমে ছোট একটি গোলাকার জাইগোট আকারে থাকে। একজন নারীর ডিম্বানু এবং পুরুষের শুক্রানু নিষিক্ত হওয়ার পরে গোলাকার বস্তুটি তৈরি হয়। এই গোলাকার বস্তুটি যখন দ্বিতীয় কোন নারীর গর্ভে স্থাপন করা হয়, তখন সেটা সারোগেসি।
সারোগেসি পদ্ধতিতে একজন নারীর সন্তান, দ্বিতীয় নারীর গর্ভে বড় হয়। দ্বিতীয় নারী সেই সন্তানের জন্ম দেয়।এটা আবিস্কার হয়েছিল চিকিৎসার জন্য। এমন অনেক নারী আছে, যারা শারীরিক সমস্যার জন্য মা হতে পারে না। তাদের চিকিৎসার জন্য, তাদেরকে মাতৃত্বের সুখ দেওয়ার জন্যই এই পদ্ধতি আবিস্কার হয়েছে।
সারোগেসি পদ্ধতি কি
সারোগেসি পদ্ধতি হল গর্ভ বা জরায়ু ভাড়া নেওয়া। সারোগেসি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে একজন নারী কোন এক যুগলের বা দম্পতির জন্য গর্ভধারণ করে থাকে। যার গর্ভ ব্যবহার করা হয় তাকে বলা হয় সারোগেট মাদার বা সারোগেট মা। যারা চিকিৎসা বা শারীরিক কারণে গর্ভধারণ করতে অক্ষম তারা এ পদ্ধতিকে ব্যবহার করে বেবি গ্রহণ করে থাকে।
সন্তান ধারণে অক্ষম কোন দম্পতির সন্তান অন্যকোন মহিলার গর্ভে ধারণ করে জন্মদানের প্রক্রিয়াকে সারোগ্যাসি বলে। অর্থাৎ একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মহিলা অন্য কোনো দম্পতির হয়ে সন্তান ধারণ করার প্রক্রিয়া হলো সারোগ্যাসি।সারোগেসি কিভাবে করা হয় তার নিয়মই হচ্ছে সারোগেসি পদ্ধতি।
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন কিঃইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন(আইভিএফ) এর মানে হচ্ছে কাঁচের ভেতর নিষেক। সুতরাং টেস্ট টিউব পদ্ধতি হচ্ছে মানবদেহের বাইরে শুক্রাণুর দ্বারা ডিম্বাণু নিষিক্ত করার পদ্ধতি।সূতরাং এই টিউবের মধ্যে যে ভ্রূণ তৈরি হয়, সে ভ্রূণকে বলা হয় টেস্টটিউব বেবি ।
আরো পড়ুনঃ গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায়
সারোগেসি কি ধরনের হয়
১। পার্শিয়াল সারোগেসিঃ পার্শিয়াল সারোগেসিতে সন্তান ধারণে মা কোনো ভূমিকাই পালন করেন না। বাবার শুক্রাণু ও সারোগেট মায়ের ডিম্বাণু আলাদাভাবে ফার্টিলাইজ করে সারোগেট মায়ের গর্ভ ধারণ এবং সন্তান প্রসব করানো হয়।
২।হোস্ট সারোগেসিঃ মায়ের ডিম্বাণু নিয়ে ল্যাবে ভ্রূণ তৈরি করা হয়। এরপর সারোগেট মায়ের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয় ভ্রূণটি। এখন এটি প্রচলিত পদ্ধতি।
সারোগেসি কিভাবে করা হয়
একজন নারীর গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারণের পদ্ধতিকে 'সারোগেসি' বলে।সারোগেসি কিভাবে করা হয় জানবো এটি হচ্ছে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতিতে নারীদেহ হতে ডিম্বাণু ও পুরুষ দেহ হতে শুক্রাণু দেহের বাইরে টেস্টটিউবে নিষিক্ত করে তা সারোগেট নারীর গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া।
বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও সংগীত শিল্পী নিক জোনাস দম্পতি সম্প্রতি কন্যা সন্তানের মা-বাবা হয়েছেন। তারা সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান লাভ করেছেন। শুধু তারাই নন বরং বলিউডের অনেকেই এই পদ্ধতিতে সন্তানের বাবা-মা হয়েছেন।
শাহরুখ খান তার ছোট ছেলের জন্ম দিয়েছেন । এ ছাড়াও বলিউড অভিনেতা তুষার কাপুর, পরিচালক করণ জোহারসহ একতা কাপুরও সারোগেসির মাধ্যমেই সন্তানের বাবা-মা হয়েছেন।
আরো পড়ুনঃ ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির রহস্য
সারোগেসি পদ্ধতি খরচ
বিষয়টি সবারই জানা যে, সন্তান ধারণের জন্য নারী ও পুরুষের মধ্যে যৌনসম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। তবে যেসব নারীর সন্তান হয় না কিংবা একক বাবা-মা বা সমলিঙ্গের অভিভাবক যারা সন্তান জন্ম দিতে পারেন না তারাই সারোগেট মাকে ভাড়া করেন।
আইভিএফ বা টেস্টটিউব বেবির ক্ষেত্রে ভারতের খরচ আনুমানিক ১ লক্ষ ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়াও সারোগেট মায়ের সুস্থতা ও চিকিৎসায় তার পেছনে অনেক টাকা খরচ করতে হয়।
সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান পেতে অনেক ক্ষেত্রে সারোগেট মায়ের আনুষঙ্গিক খরচের পরিমাণ লক্ষ লক্ষ টাকা হতে পারে।বর্তমানে বিভিন্ন দেশে গর্ভ ভাড়া দেওয়া বা সারোগেসি পদ্ধতি অবলম্বন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
সারোগেসি পদ্ধতি ইসলাম কি বলে
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-"আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন; তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন।অথবা পুত্র-কন্যা উভয়ই দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান।"সূরা আশ্-শূরা (৪২: ৪৯-৫০)।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-"আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার হুকুম দিয়েছি। তার মা তাকে অতি কষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে।"-সূরা আহ্কাফ (৪৬ : ১৫)।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- "তিনিই তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়।তারপর যখন সে তার সঙ্গে সংগত হয় তখন সে এক হালকা গর্ভধারণ করে এবং এটা নিয়ে সে অনায়াসে চলাফেরা করে। অতঃপর গর্ভ যখন ভারী হয়ে আসে তখন তারা উভয়ে তাদের রব আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, যদি আপনি আমাদের এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দান করেন তাহলে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।" (সুরা আল আরাফ ০৭ : ১৮৯)।
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-"আর যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে রাখে সংরক্ষিত, নিজেদের স্ত্রী বা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ছাড়া, এতে তারা হবে না নিন্দিত, অতঃপর কেউ এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করলে, তারাই হবে সীমালঙ্ঘনকারী।" (সুরা মুমিনূন২৩ : ৫-৭)।
উল্লিখিত আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহ, জৈবিক চাহিদা পূরণ ও বংশ বিস্তারের মাধ্যম হিসেবে বিশেষভাবে স্ত্রীকে চিহ্নিত করেছেন। এবং অধিকারভুক্ত দাসীর মাধ্যমে এই চাহিদা পূরণের বৈধতা দিলেও বর্তমানে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় এখন আর রাস্তাটি খোলা নেই।
পবিত্র কোরআনে নারীদের ফসলক্ষেত্র বলা হয়েছে, ইরশাদ হয়েছে, "তোমাদের স্ত্রী তোমাদের ফসলক্ষেত্র। সুতরাং তোমরা তোমাদের ফসলক্ষেত্রে গমন করো, যেভাবে চাও।" (সুরা বাকারা০২: ২২৩)।
পবিত্র কুরআনের বিধান অনুযায়ী জন্মদাত্রী নারীই হন সন্তানের মা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-"তাদের মা তো শুধু তারাই, যারা তাদের জন্ম দিয়েছে।" (সূরা মুজাদালাহ্৫৮ : ২)।
হযরত মোহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তার জন্য নিজের পানি (বীর্য) দিয়ে অপরের ক্ষেত সেচ করা বৈধ নয়। (সুনানে আবু দাউদ, ১১৩১)।
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, দুই চোখের ব্যভিচার (বেগানা নারীর দিকে) তাকানো, কানের ব্যভিচার যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের ব্যভিচার উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের ব্যভিচার (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করা আর পায়ের ব্যভিচার হলো ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া এবং মনের ব্যভিচার হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা।’ (মেশকাত, হাদিস : ৮৬)
ইসলাম সারোগেসিকে নিন্দা করে কারণ শিশুটি তার বংশ সম্পর্কে তথ্য থেকে বঞ্চিত হবে এবং অজ্ঞাতসারে,ভাই-বোনের বিয়েতে পরিণত হতে পারে যা একটি সমাজের জন্য বিপজ্জনক পরিণতি হতেপারে।
আরো পড়ুনঃ গনোরিয়া হলে কি কি সমস্যা হয়
সারোগেসি কি হালাল
ইসলাম মানুষের বংশধারার পবিত্রতা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। যে নারীর জরায়ুতে অন্যের শুক্রাণু আছে বা থাকার সম্ভাবনা আছে, সে অবস্থায় তাকে বিয়ে করা বংশধারার পবিত্রতা অস্বচ্ছ করে দেয়। যা হুমকির মুখে ফেলে দেয়।
আরেকটি বিষয় হলো, পুরুষের জন্য এমন নারীর শরীরে শুক্রাণু প্রবেশ করানো জায়েজ নয়, যে তার জন্য ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল নয়। সেটা শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে হোক অথবা ভিন্ন কোনো পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমেই হোক না কনো।
তা ছাড়া ব্যভিচারের অনেক স্তর আছে। ব্যভিচার মানে শুধু বিশেষ পদ্ধতির শারীরিক সম্পর্ক নয়।রাসুল (সা.) বলেছেন, "চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো (তার সঙ্গে) কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)।" (বুখারি: ৬২৪৩)।
সারোগেট মা তার ভাড়া পাওয়ার পর সন্তানকে তার মালিকের কাছে হস্তান্তর করলে শিশুর মাতৃ পরিচয় বিলুপ্ত হয়ে যায়। সন্তানের বৈধতা প্রশ্নের মুখে পড়ে। ওলামায়ে কেরাম মনে করেন সারোগেসি বা গর্ভ-ভাড়ার মাধ্যমে সন্তান জন্মদান ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ না- জায়েজ ও শরিয়তবিরোধী একটি কাজ। যা পরিত্যাগ করা মুসলিম নর-নারীর জন্য কর্তব্য।
ইসলামী স্কলারদের মতে, এই জাতীয় সারোগেট মাতৃত্বের অনুমতি নেই, কারণ এটি জিনা (ব্যভিচার) এর সমতুল্য। যেহেতু সারোগেট তার বৈধ স্বামী নয় এমন ব্যক্তির নিষিক্ত ডিম বহন করে। যে সন্তানের জন্ম হয়, বৈধ বিবাহের মাধ্যমে তার কোন বংশগত সম্পর্ক নেই।এই কারণে সন্তানটি অবৈধ বলে গন্য হবে। যেহেতু সন্তানটি অবৈধ, সেহেতু এই পদ্ধতি অর্থ্যাৎ সারোগেসিকে হারাম বলা হয়েছে।
জরায়ু ভাড়া নেওয়া ইসলামে বৈধ নয় এটা শুধুমাত্র বৈধ স্বামীর জন্য ব্যবহৃত স্থান।প্রত্যেক উলামায়ে কেরাম সারোগেসিকে হারাম বলেছেন।
সন্তান না হলে ইসলাম কি বলে
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের বেশ কয়েকটি জায়গায় জাকারিয়া (আ.) এর ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
সুরা আল-ইমরানে আল্লাহতায়ালা বলেছেন-জাকারিয়া বললেন, হে আমার প্রতিপালক কীভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে? আমার তো বার্ধক্য এসেছে এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। আল্লাহ বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। (আয়াত ৪০)।
জাকারিয়া (আ.) সন্তান চেয়ে আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করেছিলেন। বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে তার দোয়াটি অত্যন্ত ফলপ্রসু হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। অনেকেই এই দোয়ার আমল করে আশানুরূপ ফল পেয়েছেন বলে বিভিন্ন কিতাবে পাওয়া যায়।
দোয়াটি পবিত্র কোরআনে এভাবে এসেছে- رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ
উচ্চারণ: রাব্বী লা তাযারনী ফারদান ওয়া আনতা খাইরুল ওয়ারিসীন। অর্থ: হে আমার পালনকর্তা! আমাকে একা রেখো না। তুমি তো উত্তম ওয়ারিস। (সুরা আম্বিয়া: ৮৯)
এই দোয়া কবুল হওয়া প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, অতঃপর আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম, তাকে দান করেছিলাম ইয়াহইয়া এবং তার জন্যে তার স্ত্রীকে প্রসবযোগ্য করেছিলাম। (সুরা আম্বিয়া: ৯০)
জাকারিয়া (আ.) এর স্ত্রী ছিলেন বন্ধ্যা। তবু আল্লাহতায়ালা তার দোয়া কবুল করে তাকে একজন পুত্রসন্তান দান করেন।
সুরা মারইয়ামে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে- "যখন সে তার রবকে গোপনে ডেকেছিল।(৩)
সে বলেছিল, "হে আমার রব! আমার হাড়গুলো দুর্বল হয়ে গেছে এবং বার্ধক্যবশতঃ আমার মাথার চুলগুলো সাদা হয়ে গেছে। হে আমার রব, আপনার নিকট দোয়া করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি।"(৪)
(আল্লাহ বললেন) "হে জাকারিয়া, আমি তোমাকে একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম ইয়াহইয়া। ইতিপূর্বে কাউকে আমি এ নাম দেইনি।"(৭)
"সে বলল, ‘হে আমার রব, কিভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে, আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা, আর আমিও তো বার্ধক্যের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছি।" (৮)
"সে (ফেরেশতা) বলল, ‘এভাবেই’। তোমার রব বলেছেন, ‘এটা আমার জন্য সহজ। আমি তো ইতঃপূর্বে তোমাকে সৃষ্টি করেছি, তখন তুমি কিছুই ছিলে না।" (৯)
বন্ধ্যা দম্পতিদের জন্য কোরআনে বর্ণিত জাকারিয়া (আ.) এর ঘটনায় রয়েছে আশার বাণী। শিক্ষনীয় বিষয় হলো, আল্লাহর রহমত থেকে কখনো নিরাশ না হয়ে সর্বদা তার কাছে দোয়া করতে থাকা। তিনি চাইলে কাউকে বৃদ্ধ বয়সেও সন্তান দান করতে পারেন।
আল্লাহ তায়ালা ইবরাহীম (আ.) এর স্ত্রী সারাহ (আ.) এর গর্ভে ইসহাক (আ.) এবং অপর স্ত্রী হাজেরা (আ.) এর গর্ভে ইসমাইল (আ.) কে দান করেন; অথচ সেসময় ইবরাহীম (আ.) বার্ধক্যের শেষ সীমায় উপনীত হয়েছিলেন। ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর তায়ালার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছিলেন-
"সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে আমার বার্ধক্যে ইসমাইল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার রব দোয়া শ্রবণকারী।" (সুরা ইবরাহীম, আয়াত ৩৯)
মুসলমান যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। তাই বন্ধ্যাত্বের কারণে যদি সন্তান লাভের সম্ভাবনা না থাকে, তবুও মুসলমান হিসেবে আল্লাহর সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে হবে। তার জন্য সন্তানলাভের চেয়ে ধৈর্যধারণ করাই শ্রেয়।
সবকিছুই আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাধীন। তিনি যখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। আর তাঁর সকল সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার মধ্যেই রয়েছে মানুষের কল্যাণ।
পরিশেষ
পরিশেষে আমরাএই ভাবে বলতে পারি যে,সারোগেসি কিভাবে করা হয়? এ পদ্ধতি সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?সারোগেসি কি হালাল না হারাম ইত্যাদি সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা লাভ করলাম। সুতরাং এমন গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url